স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

আক্রান্ত স্বত্তেও উপসর্গ নেই ৬০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীদের

ডায়াবেটিস আক্রান্ত, অথচ কোনো ধরনের উপসর্গ নেই দেশের ৬০ শতাংশ মানুষের। আর আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে, বাকি ৮০ শতাংশেরই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণহীন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন পরিস্থিতে কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস প্রকল্পের আওতায় আগামী আগস্ট মাস থেকে দেশের ১০ শহরের ১০ লাখ মানুষের বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।

মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. বিশ্বজিৎ ভৌমিক।

তিনি জানান, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অধিকাংশই নারী। ২৬ শতাংশেরও বেশি নারীর ডায়াবেটিস রয়েছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হারের এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতেও ডায়াবেটিস নিয়ে ভালো ধারণা রাখেন মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ, বাকিদের কোনো সচেতনতা ও পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই।

বিশ্বজিৎ ভৌমিক বলেন, কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস প্রকল্পের আওতায় আগামী আগস্ট মাস থেকে দেশের আটটি বিভাগীয় শহর এবং গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজার শহরে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে যাবে একটি করে গাড়ি।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১০টি শহরের ১০ লাখ মানুষের বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় শুরু করতে যাচ্ছি। ‘মোবাইল ডায়াবেটিস সেন্টার’ নামের গাড়িতে ডায়াবেটিস ছাড়াও চোখ, দাঁত, আল্ট্রাসনোগ্রাম, লিপিড প্রোফাইলসহ আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে করা হবে। এ সময় যাদের ডায়াবেটিস শনাক্ত হবে চিকিৎসার জন্য তাদের স্থানীয় মেডিকেল কলেজ, ডায়াবেটিস সমিতি বা কাছের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ডায়বেটিস সমিতির সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চ ও জাইকার যৌথ উদ্যোগে আগামী দুই বছরে দেশের ১০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী স্ত্রিনিংয়ের আওতায় আসবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের ৪৩ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী জানেন না তারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে হার্ট বা কিডনির পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর এ রোগ শনাক্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে স্ত্রিনিং ও ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতন করতে শুরু হচ্ছে ‘কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়বেটিস’ প্রকল্প।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ডায়াবেটিসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬ গুণ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২-৩ গুণ, অন্ধত্বের ঝুঁকি ২৫ গুণ, কিডনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি ৫ গুণ ও পা কেটে ফেলার ঝুঁকি ২০ গুণ বেড়ে যায়। শুরুতে ডায়বেটিস শনাক্ত হলে ও তা নিয়ন্ত্রণে থাকলে অকাল মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। তবে মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চায় না। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মানুষের কাছে যাবো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

পরিমিত খাবারের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ কে আজাদ খান বলেন, আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবে ভাতটাই বেশি খাই। সাথে মাছ, মাংস, ডালসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার একসাথে খাই। ভাত বিষ নয়, এটা মজাদার খাবার। সমস্যা হলো খাবারের কালচার নিয়ে। বিশ্বের মধ্যে আমরা এমন এক জাতি, যারা ভাতের সাথে মিলিয়ে অন্যান্য সবজি, তরকারিও খাই। কিন্তু উন্নত বিশ্বে আলাদা। যেহেতু সব মিলিয়ে খাই, সেহেতু পরিমিত খেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *