১০২ বছর আগে আমার দাদাকে লিখা দাদীর চিঠি

December 05, 2024
By Md. Rakib Hasan

আজ থেকে ১০২ বছর আগে আমার দাদাকে লিখা দাদীর চিঠি। আমার দাদি অভিমান করে তার বাবার বাড়িতে যায়। আমার বাবার বয়স তখন আড়াই বছর। অনেক মান/অভিমান ও পারিবারিক কিছু কথা আছে চিঠিতে। স্বামীকে সম্বোধন ও শব্দচয়নের ভাষাও দেখার মতো!

 
চিঠি লিখতে চাউল ভেজে সেটা পুড়ে যাওয়ার পর গুড়া করে সেটিকে ঝেড়ে জাম গাছের বাকল বা ছালের রস মিশিয়ে তৈরি করেন কালি। আর লিখেন ময়ূরের পাখার কলম দিয়ে!

১৩২৯ |
১৬ ই অগ্রহায়ন
পাতা ১:

প্রাণাধিকা প্রাণেশ্বর,
সেলাম কোটি কোটি পর সমাচার এই যে- আজ কয়েক দিন গত হইল আপনার একখানা তিরের ন্যায় লিপিকা আসিয়া আমার কলেজায় চোট লাগাইয়াছে। আমার শরির কাতর থাকায় উক্ত পত্র খানার যথা সময়ে উত্তর দিতে পারি নাই। ৫-৬ দিন যাবত জ্বরে ভুগিয়া গত কল্য ভাত পথ্য করিয়াছি। আমাকে যদি খোদা একটু আরোগ্য করিয়াছে, আবার শ্রীমানের জ্বর গত রাত্রে আসিয়াছে আজ এ পর্য্যন্ত জ্বর ছাড়ে নাই। যাহাই হউক খোদা ভরসা খোদাতালার পায়ে বাকিটাকে ছাড়িয়া দিয়েছি। তিনি যাহাই করেন তাহাই – কবুল!

স্বামিন আপনার পত্রের উত্তর লেখিতে লেখনি চলে না কলেজা বিদির্ন হইয়া গিয়াছে। দেখুন আমি আপনাকে আপছারের মায়ের গোলাম লেখি নাই লেখিয়াছি অধিন। কিন্তু তাহার অধিন কে নয়, বাসায় যে মজিদ আছে ও আপনার পিতা সকলেই তাহার অধিনস্ত। আর এও একটা কথা আপনি স্বামি আমি স্ত্রি। আপনি আমার উপর রাগ হইলে মনের রাগে যাহা ইচ্ছা তাহাই বলিতে পারেন আমারও মন আপনার উপর রাহ হইলে কিছুই বলিতে পারি। স্বামির সহিত স্ত্রির জোর স্ত্রির সহিত স্বামির জোর ইহা সংসারের রীতি। কিন্তু ঐ কথাটুক লেখিয়াছি মনের অনেক দুঃখ ছিল বলিয়া।

পাতা ২:

ঐ আপছারের মা আমাকে কত বকিয়াছেন আপনাকে জানাইয়াছি মাকে যাহা ইচ্ছা তাহাই বলিয়াছেন তাহাও আপনাকে জানাইয়াছি এবং মছিরনও অনেকদিন অনেক কথা আপনাকে জানাইয়াছে তবু আপনি তাহার একটি উত্তর করেন নাই। আমাদের হইয়া না বলেন মায়ের পক্ষ থাকিয়া একটি কথা বলিতেন তবুত দুঃখের কিছু লাঘব হইত: আর আমরা যে মাতায় কন্যাই য্যতিশ গণনার দ্বারা ধরিয়াছি এবং ঐ সব কুৎসা সকলেই মিলে সর্বদা আন্দলন করিয়া থাকি। হায় খোয়া আমরা যদি ওসব কোন কিছু উল্লেখ করিয়া কি আমার মাতা যদি কোন কুঘোষণা করিয়া থাকেন তাহা তুমি বিচার করিবেন। আহা স্বামিন আমার মাতার মিথ্যা কথ্যটি লেখিয়াছেন এই দুঃখে হৃদয় বিদির্ন হইয়া যাইতেছে। মা আপনাকে পুত্র সমতুল্য জানেন। আপনার কত ভাল মন্দ কথা কোনদিন পিতাকে বলেন না সে সমন্দে খোদাতালার ঘরে দাড়াইয়া এবং কোরান শরিপ হাতে লইয়া কিরা করিয়া বলিতে পারি। হায় আপনি না বুঝিয়া না শুনিয়া মিথ্যা অপবাদ মাকে দিয়াছেন, খোদাতালা কি ইহার বিচার করিবেন না। আমি স্ত্রি আমাকে যেন দোষারোপ করিতে পারেন। যাহাই হউক, মাকে যাইতে আপনি লেখিলেন না কেন মা গেলে আপনার তহবিল ক্ষতি হয়। ১ বৎসর দেড় বৎসরে আপনার তহবিল কত ক্ষতি হইয়াছে। 

পাতা ৩:

তাহা সামান্য পত্রে লিখা বাহুল্য তাহাকে মাসঅন্তে ১ জোড়া করিয়া কাপড় দেওয়া হইয়াছিল এবং শ্বাশুরী সমাদরে কত খাওয়া হইয়াছিল কাজেই আপনার তহবিল ক্ষতি।
স্বামিন ইচ্ছা ছিল আপনি বাবাকে লিখিলে মা যাইবেন আমিও যাইব। ছেলেটার শীতে কষ্ট পাইতে হইত না, কিন্তু কোথায় বাবাকে মাকে যাইবার পত্র লিখিবেন আপনার পত্র খানা পড়িয়াই কলেজা ফাটিয়া যাইতেছে। আপনি মুক্ত কণ্ঠে লিখিয়াছেন তোমার পিতাকে কেন আমি, তোমার মাকে আনার জন্য লিখিব। খোদা করেন আগামি বুধবার অবশ্ব পৌঁছিতাম কিন্তু এখন দেখি মা ত আপনার হস্তলিখিত পত্র না পাইলে যাইবেন না। অপর অন্য কেহ নাই যে লইয়া যাইব আমার শরিরটাও ভাল নাই কে আমাদের তত্ত্বাবধান করিবে।
এ অবস্থায় যাইয়া কি করি, কাজ করিয়া খাইতে না পারিলে ভাত দিবে কে। এবং আগুনে শীতে ছেলেটার তত্ত্বাবধান করিবে কে। স্বামিন শ্বাশুরী নাই যে ত চতুর্দিকে দেখিবে। আপছারের মার কুবাক্য শুনিতে যাইয়া কি করি?
দেখি উক্ত তারিখে যদি যাওয়া হয় তবে বাসায় অবন্ত উঠিয়া যাইব। তবে আমার পুনঃ অনুরোধ অতিসত্বর একখানা পত্র বাবাকে লিখেবেন। হাতে হাতে পত্র পাঠাইলে অতিসত্বর পাওয়া যায়, ডাকে দিবার দরকার কি কেবল পয়সার খরচ। হাতে ২ দিনে সেই দিবসেই পাওয়া যায় বিলম্ব নাই। আমার এলাকার আনারটী আমার পরিচিত আমাদের আত্মিয়ের মধ্যে।

ইতি
আপনার বাদী (ছবি)

(ব্রাকেটে থাকা 'ছবি' প্রেরকের নাম। পুরো নাম ছবিরন)
----------------------------------------------------------

বি:দ্র: প্রিয় পাঠক, চিঠি লেখকের সম্মানার্থে উনার লেখা বানান হুবহুভাবে এক রেখে চিঠির ছবি থেকে আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করে টেক্সট আকারে সাজিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। দুয়েকটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল থেকে যেতে পারে, এর জন্য অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। চিঠি পড়ে আপনারা সকলে অবশ্যই মন্তব্য জানাবেন এই প্রত্যাশা রেখে সকলের মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি।

সুত্রঃ
গিরিধর দে
বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র



Share:

Related News

Get Every Newsletter

We are not gonna make spamming

BACK TO TOP