বিদেশ শিক্ষা সম্পাদকীয়

IELTS কি, কেন করবেন, কিভাবে করবেন

আইইএলটিএস (IELTS) নামের সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। IELTS (International English Language Testing System) হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সনদ। এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত ইংরেজিতে আপনার দক্ষতা কতটুকু সেটি যাচাই করা হয়। বিশ্বের ১৪০টি দেশের ১০ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই পরীক্ষার স্কোরকে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে। বিদেশে স্থায়িভাবে বসবাস কিংবা পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত আইইএলটিএস।

আইইএলটিএস স্কোর বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার আবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইইএলটিএস স্কোর আবার অনেক দেশে অভিবাসী হিসেবে গমনের যোগ্যতা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

আইইএলটিএস (IELTS) যেভাবে করবেন
বাংলাদেশে আইইএলটিএস পরীক্ষা ব্রিটিশ কাউন্সিলের আওতায় হয়ে থাকে। তবে এজন্য অন কম্পিউটার পরীক্ষা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং সিলেট থেকে দিতে পারবেন। আর অন পেপার পরীক্ষা দিতে পারবেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা এবং রাজশাহী থেকে।

ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে যা করবেন
প্রয়োজন ২ কপি সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজ রঙ্গিন ছবি। ৬ মাসের বেশি পুরনো ছবি ব্যবহার করবেন না। আপনার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যায় এমন ছবি ব্যবহার করবেন। ছবি তোমার সময় চশমা খুলে ছবি তুলবেন। ছবির অপর পাশে কলম দিয়ে নিজের নাম লিখে দেবেন। পাসপোর্ট না থাকলে দ্রুতই পাসপোর্ট বানিয়ে নিন। কারণ আইইএলটিএস এর রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাসপোর্ট লাগবেই। রেজিস্ট্রেশন সেন্টারে যাওয়ার সময় পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে যেতে পারেন।

যদি আপনি আপনার আইইএলটিএস স্কোরটি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজে পাঠাতে চান তাহলে অ্যাপ্লিকেশন ফর্মে সেই বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজের নাম নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। নির্দিষ্ট সেন্টারে গিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম জমা দিতে হবে।

আইইএলটিএস পরীক্ষার ধরন
আইইএলটিএস পরীক্ষা ২ ধরনের পদ্ধতিতে নেওয়া হয়। একাডেমিক ও জেনারেল ট্রেনিং (জিটি)।

লিসেনিং
লিসেনিং এ আপনাকে মোট ৪টি রেকর্ডিং শোনানো হবে। উল্লেখ্য, রেকর্ডিং এ কনভারসেশন থাকবে ব্রিটিশ উচ্চারণে। এই চারটি রেকর্ডিং শোনার পর আপনাকে আলাদা একটি উত্তরপত্রে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। একটি রেকর্ড একবারই বাজিয়ে শোনানো হবে। রেকর্ডিং কথোপকথন শুনে এ অংশে প্রশ্নের উত্তর করতে হয় পরীক্ষার্থীদের। কথোপকথন শুনে বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। যেখানে ৪০টি প্রশ্ন থাকে। ৩০ মিনিটে ৪টি অংশে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়। এ অংশে পরীক্ষার্থীদের অ্যাকসেন্ট বুঝতে হয়। তারা ৪ রকম অ্যাকসেন্টের মুখোমুখি হতে পারেন। যেমন- ব্রিটিশ, আমেরিকান, কানাডিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান।

রাইটিং
এ অংশে ইংরেজি লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয়। যেখানে ১ ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে বেশি নম্বর থাকে। রাইটিং-এ ২ ধরণের টাস্ক থাকে। টাস্ক-১-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেখচিত্র বা গ্রাফ-এর বর্ণনা দিতে হতে পারে। টাস্ক-২-এর ক্ষেত্রে মূলত বিশ্লেষণী দক্ষতা, সমালোচনামূলক মূল্যায়ন এর দরকার হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন বা সমালোচনামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ বিস্তারিতভাবে পড়া থাকলে বেশ সহায়ক হয়।

এক্ষেত্রে একটি ফরম্যাট অনুসরণ করা যায়। প্রথম ও দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে সূচনা। এরপর মূল কথা বা আইডিয়া, তারপর কারণ বা যৌক্তিক বিশ্লেষণ। সবশেষে উদাহরণ। এ নিয়মটি অনুসরণ করলে সাধারণত স্কোর ভালো আসে। এজন্য ইংরেজি গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন পড়ার চর্চা করলে সেটি কাজে লাগবে।

স্পিকিং 
স্পিকিং অংশে পরীক্ষার্থীদের মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, যেমন: পরিবার, পড়াশোনা, শখ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ২ মিনিট কথা বলতে হয়। এর আগে প্রস্তুতির জন্য এক মিনিট সময় দেওয়া হয়। তৃতীয় অংশে থাকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরীক্ষকের সঙ্গে ৪-৫ মিনিটের কথোপকথন।

এ অংশে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। যেমন- কথার গতি ও সাবলীলতা, শব্দভাণ্ডারের বিস্তৃতি, ব্যাকরণের বৈচিত্র্যময় ও নির্ভুল ব্যবহার এবং নির্ভুল ও বোধগম্য উচ্চারণ।

রিডিং
এ অংশে পরীক্ষার্থীদের ১ ঘণ্টায় ৩টি অনুচ্ছেদ থেকে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বিভিন্ন জার্নাল, বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন থেকে কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। সেখান থেকেই বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর, সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা ইত্যাদি প্রশ্ন থাকে।

গ্রেডিং সিস্টেম কি? 
IELTS এ কোনো পাশ নাম্বার নেই। তার বদলে দেয়া হয় ব্যান্ড স্কোর। আপনি কত নাম্বার পেয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে ১-৯ এর মাঝে আপনাকে একটি স্কোর দেয়া হবে। IELTS এর চারটি মডিউল আছে- রাইটিং, রিডিং, স্পিকিং এবং লিসেনিং। এই চার মডিউলে আপনি যত পাবেন তার গড় হচ্ছে আপনার ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর। সাধারণত ৬ বা তার উপরের স্কোর করতে পারলে সেটিকে ভালো ব্যান্ড স্কোর ধরা হয়। নিচের ছবিতে কত নাম্বার পেলে কত ব্যান্ড স্কোর সেটি দেয়া হলো।

আইইএলটিএস (IELTS) এর ফলাফল কতদিন পর দেয়?
IELTS পরীক্ষার ১৩ দিন পরে পরীক্ষার কেন্দ্রে ফলাফল প্রকাশ করে।পাসপোর্ট দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া এখন ইন্টারনেট থেকেও IELTS পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা যায়।

ফলাফল কতদিন কার্যকর থাকে?
সাধারণত IELTS পরীক্ষার স্কোর পরীক্ষার দিন থেকে ২ বছরের জন্য বৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। যদি IELTS টেস্ট রিপোর্ট ফরমটি ২ বছরের চেয়ে পুরনো হয়, তাহলে আরেকটি টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম পেতে পুনরায় পরীক্ষা দিতে হবে। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, প্রার্থীকে একটি মাত্র টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম দিবে। যদি কেউ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করে, সেক্ষেত্রে একাধিক টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম প্রয়োজন হয়। এর জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিসে আবেদন করতে হবে। অতিরিক্ত প্রতিটি টেস্ট রিপোর্ট ফর্মের জন্য প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা দিতে হবে। কিন্তু প্রার্থীর হাতে একটির অধিক টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম দিবে না। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিল ঐ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম পাঠিয়ে দিবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *