চলছে ভালোবাসার মাস ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেনটাইনস ডে ও ফাগুনের সৌরভ—দুটিই নিয়ে আসে ফেব্রুয়ারি। ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি এখন নতুন উৎসবের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে বাঙালির কাছে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ফাল্গুন মাসের আগমন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদ্যাপনের জন্য কত না উপায় এখন। তাই এই মাসে কাছের মানুষদের নিয়ে কোথায় ঘুরতে যেতে পারেন, তা জানাতে আজকের এই আয়োজন।
যেহেতু পয়লা ফাল্গুন এবং ভ্যালেনটাইনস ডে উপলক্ষে কোনো সরকারি ছুটি নেই, তাই খুব বড় ভ্রমণ–পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না। তবে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ছোটখাটো একটা পরিকল্পনা করাই যায়। বিশেষ দিনের সুবাদে বিভিন্ন রিসোর্ট এবং হোটেলে থাকে ভিন্ন রকমের আয়োজন। অল্প সময়ের মধ্যে আরামদায়ক ভ্রমণ–পরিকল্পনার জন্য ঢাকার আশপাশের রিসোর্টগুলোর তুলনা হয় না।
আড়াইহাজার মেঘনার চর
ঢাকার কাছে আড়াইহাজার চর এলাকা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। বিস্তীর্ণ এলাকায় এই রকম মনোরম পরিবেশ আর কোথাও পাবেন না এই যান্ত্রিক নগরীর আশেপাশে। সারাদিনের জন্য ঘুরতে আসতে পারেন এখানে।
চাইলে লং ড্রাইভেও যেতে পারেন। সেখানে দেখতে পারবেন কাশবন, খোলা আকাশে পাখির মেলা আর পানির স্রোতের মধুর শব্দ। খাওয়া-দাওয়া এবং ট্রলারের খরচ মিলিয়ে মোটামোটি ৩/৪ জনের জন্য ৭০০-১০০০ টাকা খরচ হতে পারে। যাওয়ার জন্য প্রথমে গুলিস্তান থেকে যেতে হবে মদনপুর। সেখান থেকে আড়াইহাজার যাবেন।
নরসিংদী জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ি ঘুরতে যাওয়াটাও বেশ জৌলুসের! এ বাড়ির বাইরের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। নিখুঁত সুন্দর্যের এই ভবনগুলো শত বছর পরও ঐতিহ্যপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে। উকিল বাড়ি নামে পরিচিত নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা বাজার থেকে মাত্র ১০ মিনিট এর দূরত্বে অবস্থিত লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ি।
মায়াদ্বীপ
নারায়নগঞ্জ জেলার বারদী ইউনিয়নের মায়াদ্বীপ হতে পারে বিশেষ দিনের বিকেল কাটানোর দারুন এক স্থান। মায়াদ্বীপ হলো মেঘনা নদীর বুকে ভেসে ওঠা একটি দারুন সুন্দর চর এর নাম। ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী বারদী ইউনিয়নের অন্তর্গত নুনেরটেক গ্রামেই মায়াদ্বীপের অবস্থান। এ গ্রামটি মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।
নদীপথে সোনারগাঁ থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার। আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে মেঘনার বুক চিরে জেগে ওঠা চরের নাম রেখেছিল স্থানীয়রা নুনেরটেক। দর্শনীয় এ স্থানে চাইলে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে আসতে পারেন। যাওয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ চৌরাস্তা (মোগরাপাড়া চৌরাস্তা) যাবেন। সেখান থেকে যাবেন বারদী, তারপর ঘাট পর্যন্ত গিয়ে ট্রলারে/নৌকায় করে যাবেন।
জিন্দা-পার্ক
১৫০ একর জায়গা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার দাউদপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে জিন্দা পার্ক। ১০ হাজারের বেশি গাছ, ৫টি জলধার ও অসংখ্য পাখি রয়েছে এ পার্কে। এ ছাড়াও রয়েছে ক্যান্টিন , লাইব্রেরি, চিড়িয়াখানা এছাড়া রয়েছে ৮ টি সুসজ্জিত নৌবহর।
সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে এ পার্কটি। প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০০ টাকা ও ছোটদের ৫০ টাকা। পার্কিং চার্জ ৫০ টাকা।
পদ্মা রিসোর্ট
ঢাকার আশেপাশের সবচেয়ে সুন্দর একটি স্পট হলো পদ্মা রিসোর্ট। ঢাকা থেকে ৪০ কি.মি. দূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং নামক স্থানে পদ্মা নদীতে চড়ের উপর এই রিসোর্টটি অবস্থিত। সকালের নাস্তার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়ে ১০০ টাকা এবং দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য জনপ্রতি খরচ পড়ে ৩০০ টাকার মতো।
পর্যটকগণ ইচ্ছা করলে অর্ধেক বেলা অথবা পুরো ২৪ ঘণ্টার জন্য কটেজ ভাড়া নিতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ভাড়া ২ হাজার টাকা। সকাল ১০টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ভাড়া ৩ হাজার টাকা। পদ্মারিসোর্ট যেতে হলে সবার প্রথমে মাওয়া ঘাটে গিয়ে রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোটে করে যেতে হবে।
জল জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট
নাম শুনলেই বোঝা যায় স্থানটি বেশ রোমাঞ্চকর। রিসোর্টটি পূবাইলে এক সাবেক পাইলট তৈরি করেছেন। বিশাল একটি বিল, পুকুর আর বন-জঙ্গল আছে এখানে। যে কেউ চাইলে একটা দিন এখানে কাটিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
সারাদিনের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকা (সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকেলে স্ন্যাক্স)। এক দিন এবং একরাতের জন্য ৩০০০ টাকা জন প্রতি। শিশু, কাজের লোক ও ড্রাইভারদের জন্য ৬০০ টাকা জন প্রতি।
দুপুরের খাবার হিসেবে ১০/১২ রকম দেশি আইটেম। মোটা চালের ভাত, পোলাও, মুরগির ঝোল, ছোট মাছ আর টক দিয়ে কচুমুখির ঝোল, দেশি রুই মাছ, ডাল, সবজি এবং কয়েক রকমের সুস্বাদু ভর্তা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর চারুকলা ইন্সটিটিউট এর প্রাঙ্গণটি অনেকেরই পছন্দের জায়গা। ঢাকার মাঝে এটা এমন একটা জায়গা যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়টা হারিয়ে যায়নি। টি এস সি এলাকাটি সবসময়ই তরুণদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে থাকে। এরই মাঝে নিজেদের আলাদা করে নেন কেউ কেউ। টি এস সির ভেতরে বারান্দায় বা মাঠে বসে অনেকেই সময় কাটাতে পছন্দ করেন। তারুণ্য মুখরিত এলাকাটিতে এসে বয়স্ক মানুষও যেন বয়স হারিয়ে তরুণ হয়ে যেতে চান।
বই মেলা
বই মেলা জায়গাটা ঠিক ঘোরার জায়গা নয়, সেখানে মানুষ বই দেখতে বা কিনতেই যায়। আপনার ভাললাগার মানুষটিকে সাথে নিয়ে তাকে কিনে দিতে পারেন একটা কবিতার বই। নিশ্চয়ই খুশি হবেন তিনি।
সোনার গাঁ
বাংলার এক প্রাচীন রাজধানী সোনার গাঁ, যেখানে আপনি এক দিনে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।উপভোগ করার মত আছে অনেক কিছুই। জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে প্রধান ফটকে দুজন অশ্বারোহী, গরুর গাড়ির ভাস্কর্য, লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সদ্য নির্মিত জয়নুলের আবক্ষ ভাস্কর্য, ক্যান্টিন, লোকজ রেস্তোরা, সেমিনার হল, ডাকবাংলো, কারুশিল্প গ্রাম, কারুপল্লি, জামদানি ঘর, কারু-মঞ্চ, কারু-ব্রিজ, মৃৎশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র। এছাড়াও গ্রামীণ উদ্যান, আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন লেক, বড়শিতে মাছ শিকার. নৌকায় ভ্রমণ ও বনজ, ফলদ, ঔষধিসহ শোভাবর্ধন প্রজাতির বাহারি বৃক্ষরাজি ইত্যাদিও আপনাকে দিতে পারে অসাধারণ একটি সময়। এছাড়াও আছে পানাম নগরী, ভগ্নপ্রায় এই জায়গাটিতে পুরনো সব বাড়ি আর বিভিন্ন স্থাপনার মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে আপনার অনুভূতিটাই অন্যরকম হয়ে যাবে।
ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবর
যে জায়গাটির কথা না বললে লেখাই সম্পূর্ণ হয় না, তা হল ধানমন্ডি লেক। এই লেক আর লেকের পার্শ্ববর্তী জায়গা গুলো সবসময়ই বিভিন্ন মানুষ দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, এর পাশাপাশি বিশেষ দিনগুলোতে তরুণদের ভিড় দেখা যায় রবীন্দ্র সরোবর এর মুক্ত মঞ্চ এলাকায়।