সাহিত্য

ছোটবেলার দাদী-নানীদের ভাষা

দাদী-নানীদের ভাষা

বাবার চাকুরীর সুবাধে ছোট বেলা থেকে ঢাকাতে থেকেছি, ঢাকাতেই ছোট থেকে বড় হয়েছি। গ্রামে মাঝে মাঝে বেড়াতে যেতাম। গ্রামে গিয়ে মায়ের ভাষায় নয় দাদী-নানীদের মুখে আঞ্চলিক ভাষায় কথা শুনতাম। তখন বইয়ের ভাষা থেকে আলাদা সেই ভাষার কথা শুনলে কেমন যেন বেখাপ্পা লাগতো।

বর্তমানে দাদী- নানী কেউই বেঁচে নেই। তাদেরকে যেমন মিস করি তেমন তাদের ভাষাকেও মিস করি। তাদের মুখে সেই ভাষায় কথা শোনার জন্য মন আনচান করে।

এখন গ্রামে যাই কদাচিত। দাদী-নানী না থাকার কারনে গ্রামের যাওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। নগর সভ্যতার ছোঁয়া এখন গ্রামেও লেগেছে। শিক্ষার হার বেড়েছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, জীবন- যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। গ্রামের লোকও এখন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে, শহুরে জীবন-যাপন করে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার লোক দিন দিন কমে আসছে। এক সময় এই ভাষায় কথা বলার জন্য মনে হয় আর একজন লোকও থাকবে না। কালের গর্ভে ভাষাটি হারিয়ে যাবে।

আমার পুর্বপুরুষ, একটা বিশাল অঞ্চলের লোকজনের মুখের ভাষা এক সময় হারিয়ে যাবে তা মেনে নেয়াটা আপনজনের মৃত্যু মেনে নেয়ার মতই কষ্টের। কারন খাদ্য- পানিয়ের তৃষ্ণার মত নিজের ভাষারও প্রতিও তৃষ্ণা আছে।

জানি, কালের আবর্তে একসময় এই ভাষায় কথা বলার মত কেউ থাকবে না। কিন্ত ভাষাটাকে মানুষের মুখে না হোক বইয়ের পাতায় বাঁচিয়ে রাখার জন্য, আছে কিনা জানিনা, প্রতেকটি এলাকার আঞ্চলিক ভাষার উপর একটি অভিধান থাকা দরকার।

গরম- ততা
শীত – ঝার
মুড়ি- উরুম
মুরগী- কুকড়া
মশারী -মইর
পকেট- জেব
তরকারী- ছান
ঝোল- মউ
লুংগী- তহফন
জামা- পিরান
ঝগড়া- কাইজ্জা
ধমক- খেজি
সকাল- বেইন
সন্ধা- হাইঞ্জালা
পেয়ারা- গম
ঠান্ডা- টেলখা
গোসল- বুর
লাথি- বেদা
ডিম- বদা
পুকুর- পুশকুনি
মেঘ- হাজ
নদী- গাং
বজ্রপাত-বানচিলকি
পাট- নাইল্লা
বাজার-আড়ং
পায়খানা- টাট্টি
বিকাল-মাদান
চিরুনী-কাফুই
শখ- আউস
ষাড়- বেরেশ
পঁচা- কুইয়া
ছাড়পোকা- উলুশ
কাউন- দোন্দা

লেখক : ইকবাল হোসাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *