সাহিত্য

ফাত্তাহ তানভীর রানার “ব্ল্যাক ম্যাজিক”

মশালের আলোতে উঠোন আলোকিত। বড় মশাল মাথার অনেক উপরে ঝোলানো রয়েছে।
– সাদা ভালোবাসা দে।
এক গ্লাস দুধ নিয়ে এলো রিতা। দুধ খেয়ে আবারও ধ্যানমগ্ন হলেন কুতুব ফকির।

রাতের আবছা আলোয় সবার মুখমণ্ডল তামাটে মনে হয়। কুতুব ফকিরকে ঘিরে শমসের ও তার দলবল। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার; এ এলাকায় মশালটা ছাড়া অন্য কোনো আলো রয়েছে বলে মনে হয় না।

– তোরে কেউ বান মারিছে?
– জানি না হুজুর, বলল শমসের। তয় খালি পুলিশ খোঁজে! মেলা মামলা হইচে মোর নামে।
– মামলা করে কেডা?
– আমি তো কাম সাইরা-মাইরা দিই। আর তো জানিনে।
– যারা মামলা করে, তাগো কিছু একটা করন যায় না গুরু?

কুতুব ফকির চুপ। মাথা নিচু করে বসে আছেন ফকির। চারদিকে শমসেরের লোকজন তাকে ঘুরে জিকিরের মতো করছে।
– দিল্লিতি নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজারি একটা গরু দিতি হাবি। সিখানি সিরাজ ভাই আছে। বড় বাজার- বড় মাজার; লোক হাজার-হাজার! একটা গরুতি কিচ্ছু হবিনি? সব দ্যাশের রাজারা সেখানি থায়ে।
– এই দ্যাশের রাজাও যায় সেখানি? জিজ্ঞেস করল রিতা।
– চুপ বেয়াক্কল! এই দ্যাশে রাজা আছে নাহি? দ্যাশে প্রধান থায়ে। মেয়া মানুষ বেশি কতা কয়।

কুতুব হুজুর আবার চুপ। নীরবতা ভাঙে কিছুক্ষণ পর।
– তোর জন্যি দরকার পড়লি দিল্লি যাবানি। সিন্নি না দিলি পারে এ যাত্রায় তরী আর তীরে ভেড়বে নানে।
শমসের হুজুরের পায়ে পড়ে গেল।
– যা লাগে সব দিতাম।
– যা, পা ছাড়। আইজ যাইগা। আবার আসুমনে। আইজ রিতার শরীল ভালা না। রিতা বড় দুঃখী মেয়ে; ওর বাপ-মারে মেইরে দিয়াছে। ওরে একটু দেখে-শুনি রাখিস।

কুতুব ফকির উঠে হাঁটা দিলো। পেছনে শমসেরের দল। গহীন বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে চলছে গন্তব্য পথজুড়ে।

অন্ধকারে কেউ কারো চেহারা টের পাচ্ছে না। হঠাৎ ওরা আলো দেখতে পেল। এক আদিবাসী বুড়ি বনের ভেতরে ভাত রান্না করছে। মাঝরাত। ওদের সবার ক্ষুধা পেয়েছে। বুড়ি তাদের ভাত খেয়ে যাওয়ার অনুরোধ করল। কিন্তু কুতুবের সময় কম। সে খেতে রাজি হলো না।
– খালি পারি আমি যাতি পারবো না। চল, আমারে বনডা পার করি দে তোরা। আমি পথ-ঘাট চেনবো নানে।

হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা শেষ হয় না। বনের শেষ কোথায়?

আচমকা বাতাসের ঝটকায় সবাই থেমে গেল। কুতুব দক্ষিণ দিক দেখিয়ে বলল, ‘ওডা রাস্তা, যা তোরা। আমি আমার রাস্তা পেইয়েছি।’

সবাই রাস্তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার কুতুবের কাছে বিদায় নেওয়ার জন্য তাকালেই দেখলো; কুতুব নেই। খুঁজেও কেউ কুতুবকে পেল না।

সবাই কুতুবের দেখানো রাস্তায় হাঁটা দিলো। প্রচণ্ড ক্ষুধা সবার পেটে। ফকিরের খেদমত করতে গিয়ে ওরা কেউ রাতের খাবার খায়নি।

এখন ওরা রান্নারত বুড়ি নানির খোঁজ করছে। তাকে পেলে খাবার খেয়েই তারা আস্তানায় যাবে। গত রাতে গুরুকে পেয়ে তাদের ডাকাতি দেওয়া হয়নি। এখন খেয়ে-দেয়ে সারাদিন আস্তানায় ঘুমিয়ে থাকবে।

সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *