যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা অনিশ্চয়তায় ভিন্ন দেশগুলোতে ঝুকছে শিক্ষার্থীরা

ভিসা ও নিয়মের কঠোরতা বাড়ানোর মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে বিকল্প ভাবতে হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। আংশিকভাবে হলেও এই বিকল্প হয়ে উঠছে কাতার। দোহা শহরের উপকণ্ঠে গড়ে ওঠা ‘এডুকেশন সিটি’ ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের। নামকরা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে এখানে। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো শিক্ষার্থী দোহায় এসে ভর্তি হয়েছেন নর্থওয়েস্টার্ন, কার্নেগি মেলন, জর্জটাউন, টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ও ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাসে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ফরাসি বিজনেস স্কুল এইচইসি প্যারিস ও হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটি।

ভর্তি বেড়েছে ১২%

কাতার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত এ শিক্ষাকেন্দ্রে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি বেড়েছে ১২ শতাংশ, মোট শিক্ষার্থী এখন ৪ হাজার ৪৬৩ জন। যদিও এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর আসা প্রায় এক মিলিয়ন বিদেশি শিক্ষার্থীর তুলনায় খুবই ছোট সংখ্যা। তবু শিক্ষার্থী বাড়ার কারণে দোহাকে বৈশ্বিক শিক্ষার নতুন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

টানাপোড়েনে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়, সুবিধা নিচ্ছে দোহা

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য কাতারে শাখা খোলা এখন বড় অর্থনৈতিক সহায়তা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রতিবছর তাদের দোহা মেডিকেল স্কুল পরিচালনার জন্য প্রায় ১৩০ মিলিয়ন ডলার পায়। ২০১২ সাল থেকে মোট অর্থায়ন হয়েছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে জর্জটাউন ও কার্নেগি মেলন তাদের চুক্তি আরও ১০ বছর বাড়িয়েছে।

তবে এই অংশীদারত্ব নিয়ে ওয়াশিংটনে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেন, হামাসের অফিস থাকা কাতার মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ বিতর্কের মধ্যেই ২০২৪ সালে টেক্সাস এঅ্যান্ডএম তাদের কাতার চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়।

তবু কাতারের পরিকল্পনা থেমে নেই। ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মারমোলেখো জানিয়েছেন, টেক্সাস এঅ্যান্ডএমের ফাঁকা জায়গায় নতুন এক ‘মাল্টি–ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস’ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে কাজ করবে।

বৈশ্বিক শিক্ষার মানচিত্রে নতুন প্রতিযোগিতা

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসা দেওয়া জুলাই মাসে টানা চতুর্থ মাসের মতো কমেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন—সবাই এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন স্কলারশিপ ও স্যাটেলাইট ক্যাম্পাসে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

সাংহাইয়ের শিক্ষা পরামর্শক ম্যাগি ট্যান বলেন, ‘এনওয়াইইউ শাংহাই ও ডিউক কুনশান ক্যাম্পাসে আগ্রহ এখন অনেক বেড়েছে।’ একইভাবে এনওয়াইইউ আবুধাবিতেও যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, হাঙ্গেরি, জাপান ও কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা পড়তে আসছেন।

কাতারে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুদমুক্ত ঋণ, যা স্নাতকোত্তর শেষে কয়েক বছর কাজ করলে ঋণ মওকুফও পাওয়া যায়। মারমোলেখো বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা আর শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক নয়; এটি এখন সত্যিকারের বৈশ্বিক খাত।’

Share:

Related News

Get Every Newsletter

We are not gonna make spamming

BACK TO TOP