একটা বয়স পার হওয়ার পর আমরা অনেকেই লক্ষ্য করি, পুরুষদের জীবনে যেন এক ধরনের নিঃসঙ্গতা এসে পড়ে। প্রথমে ধীরে ধীরে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে আসে, তারপর সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাদের দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আর সবশেষে, হয়তো ঘরে বসে একাকীত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকেন তারা।
পুরুষের একাকীত্ব বিষয়টি একটি গভীর ও বাস্তব সমস্যা যা সমাজে পর্যাপ্তভাবে আলোচিত হয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক পুরুষই মানসিকভাবে একা হয়ে পড়েন। এই একাকীত্ব শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক বাস্তবতা। গবেষণা বলছে, ৪৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে একাকীত্বের হার নারীদের তুলনায় বেশি।
এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। প্রথমত, পুরুষরা সাধারণত বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে নারীদের মতো গভীর সামাজিক সংযোগ গড়ে তোলে না। বিয়ের পর কিংবা কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর অনেক পুরুষ তাদের পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেন। আবার অবসরের পর কর্মক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তাদের প্রতিদিনের সামাজিক সংযোগও হ্রাস পায়।
দ্বিতীয়ত, আমাদের সমাজে এখনও পুরুষদের মানসিক দুর্বলতা প্রকাশ করাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়। ফলে তারা মানসিক কষ্ট বা একাকীত্ব নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করেন। এই চুপ থাকা আরও বেশি বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে।
পুরুষের একাকীত্ব শুধু সামাজিক সমস্যাই নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি একাকীত্ব ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, স্মৃতিভ্রষ্টতা এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়াতে পারে। ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে একা থাকা ব্যক্তিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৯% বেশি।এ সমস্যা সমাধানে তারা খুজঁতে থাকেন কারো সঙ্গ।
বয়স যতই হোক
বয়স হয়তো পঞ্চাশ পেরিয়েছে, এদিকে সদ্য পঁচিশের কোনো টগবগে তরুণীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন সেই প্রবীণ। বয়সে মেয়েটি নিজের অর্ধেক হলেও তার জন্য পরিপূর্ণ প্রেম উথলে পড়ছে হৃদয়ে। বয়স্ক পুরুষটি হয়তো নিজেও বুঝতে পারছেন না, হচ্ছেটা কী! গবেষণা বলছে, বেশি বয়সের পুরুষের ভেতরে কম বয়সী নারীর প্রেমে পড়ার প্রবণতা থাকে। আবার অনেক কম বয়সী নারীও বয়স্ক পুরুষকে বেশি পছন্দ করেন প্রেমিক বা জীবনসঙ্গী হিসেবে।
মন খুলে মনের কথা বলা
বয়স বাড়তে থাকলে চারপাশে বন্ধুর সংখ্যাও কমতে থাকে। একটা পর্যায়ে অনেকে নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করতে শুরু করেন। সম্পর্কের যত্ন না করার কারণে পরিচিত মানুষগুলোও দূরে সরে যেতে থাকে। একটা সময় নিজের মনের কথা খুলে বলার মতো মানুষ তারা খুঁজে পান না। দীর্ঘদিনের অযত্নে হয়তো কাছের মানুষটিও দূরের মানুষ হয়ে যায়। এদিকে অল্প বয়সী মানে দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ সবই কম। এই বয়সে মানুষ ফ্যান্টাসি বেশি খোঁজে। তাই এরকম কারও কাছে মনের কথা খুলে বলা সহজ হয়। তখন বয়স্ক পুরুষেরা কম বয়সী নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। অন্যদিকে একজন বয়স্ক ও দায়িত্বশীল পুরুষকে বেশি ভরসা করে কম বয়সী নারীরা। দুইজনের চাওয়া-পাওয়া মিলে গেলেই শুরু হয় প্রেম।
শারীরিক আকর্ষণ
যতই মনকে প্রাধান্য দেওয়া হোক না কেন, শারীরিক আকর্ষণকে উপেক্ষা করতে পারেন ক’জন! বেশি বয়সে এসেও যদি কোনো তরুণীর শারীরিক সঙ্গ পাওয়া যায়, সেই সুযোগ হাতছাড়া করার কথা ভাবেন না বেশিরভাগ পুরুষই। তাই বয়স বাড়লেও কোনো তরুণীর প্রেমে হাবুডুবু খান তারা।
শান্তি ও যত্ন
মানুষ শান্তি খোঁজে। বয়স বাড়তে থাকলে চারপাশে নানা অশান্তি এসে ঘিরে ধরতে শুরু করে। সেসব থেকে নিষ্কৃতি পেতে এই অসমবয়সী প্রেমের পথে পা বাড়ান অনেক পুরুষ। যত্ন এবং ভালোবাসার খোঁজ পেলে তারা সেদিকে ছুঁটে যেতে দ্বিধা করেন না। তখন সেই তরুণীর মন পাওয়ার জন্য তারা সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে রাজি থাকেন।
We are not gonna make spamming
© 2025 Academic Diary. All Rights Reserved.
BACK TO TOP