রাস্তায় লাল সংকেত দেখলে সবাই গাড়ি থামান। কিন্তু জীবনের ব্যস্ত পথেও বিরতির কথা কি ভেবে দেখেন?
কাজ, পরিবার, টেনশন, সোশ্যাল মিডিয়া — সব মিলে মাথার ভেতর যেন একটানা হর্ন বাজতে থাকে। ঠিক তখনই জীবনে দরকার একটা ‘স্টপ সাইন’। কারণ থামতে জানলে পথ চলা মসৃণ হয়।
প্রতি বছর ৩১ আগস্ট বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ওয়ার্ল্ড স্টপ সাইন ডে। ১৯১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে প্রথম স্টপ সাইন বসানো হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে এটি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে এবং হয়ে ওঠে সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। তবে শুধু গাড়ি নয়, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও এই প্রতীকের বার্তা প্রযোজ্য—মাঝে মাঝে থামতে শিখলে সত্যিই অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
চলুন জেনে নেই কোন কোন সময় দরকার এই লাল সংকেত-
অফিসের ডেডলাইন, ঘরের কাজ, পড়াশোনা — সব মিলে অনেক সময় মাথার মধ্যে যেন জট লেগে যায়। একটানা কাজ করলে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাও কমে যায়। তাই যখন মনে হবে আর পারছেন না, তখন ১০-১৫ মিনিটের বিরতি নিন। এক কাপ চা খেয়ে আসুন, জানালা দিয়ে বাইরে তাকান, অথবা শুধু গভীর শ্বাস নিন। এই ছোট্ট বিরতি আপনার উৎপাদনশীলতা অনেক বাড়াবে।
বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে একজন ব্যবহারকারী প্রায় ৩ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান। এটা আমাদের বিশ্রাম নয়, বরং মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই ফোনে সময়ের সীমা নির্ধারণ করুন। অথবা রাতে ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে বই পড়তে পারেন বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। এতে ঘুম ভালো হবে, মনও সতেজ থাকবে।
নেতিবাচক চিন্তা যখন মাথায় ঘুরতে থাকে, তখন মন আরও ভারী হয়ে যায়। এই অবস্থায় এসটিওপি -- স্টপ টেকনিক কাজ করে।
এস বা স্টপ মানে নিজেকে থামান। টি বা টেক আ ব্রেক অর্থ গভীর শ্বাস নিন। ও বা অবজার্ভ অর্থ চারপাশ বা নিজের অনুভূতিকে লক্ষ্য করুন। এবং পি বা প্রসিড মানে শান্তভাবে সামনে এগিয়ে যান।
চেষ্টা করে দেখুন। দিনে মাত্র ৫ মিনিটের এই অভ্যাস মনকে অনেকটা হালকা করে দেবে।
ঝগড়ার সময় আবেগের বশে বলা একটি কঠিন বাক্য সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে। এর পরিবর্তে থামুন, পানি পান করুন বা কিছুক্ষণের জন্য অন্য ঘরে চলে যান। গবেষণায় দেখা গেছে, ঝগড়ার সময় মাত্র ২০ মিনিট মাথা ঠান্ডা করতে ব্যয় করলে তা সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীর প্রতিদিনই নানান সংকেত দেয়। মাথা ব্যথা, ক্লান্ত চোখ, অবসাদ — এসবই ক্লান্তির লক্ষণ। কিন্তু আমরা সেগুলোকে এড়িয়ে যাই। দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, পর্যাপ্ত পানি পান, আর ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখে। তাই নিয়মিত বিরতি নিয়ে শরীরকে রিচার্জ করতে দিন।
জীবনের স্টপ সাইন আমাদের থামিয়ে দেয়ার জন্য নয়, বরং নিরাপদে চলার জন্য। যেমন রাস্তায় স্টপ সাইন দুর্ঘটনা কমায়, তেমনি জীবনে থামতে শেখাও আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই কাজের ভিড়ে, দুশ্চিন্তার মাঝে বা সম্পর্কের টানাপোড়েনে—নিজেকে সময় দিন, বিরতি নিন, তারপর নতুন শক্তি নিয়ে এগিয়ে যান।
We are not gonna make spamming
© 2025 Academic Diary. All Rights Reserved.
BACK TO TOP