জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীই বেকার : উপাচার্য

August 17, 2025
By Sub Editor

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ১০ লাখ শিক্ষার্থী অনার্স পাস করেন। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ, ৪ লাখ গ্র্যাজুয়েটই বেকার থাকেন। বাকি ৬ লাখের মধ্যে ৪ লাখ গ্র্যাজুয়েট সরকারি-বেসরকারি চাকরি করেন। দুই লাখ গ্র্যাজুয়েট নিজের উদ্ভাবিত কোনো কর্মসংস্থান থেকে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ শনিবার (১৬ আগস্ট) সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ তথ্য তুলে ধরেছেন। ‘বাংলাদেশে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ সেমিনার বিশেষ অতিথি ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে এ সেমিনারের আয়োজন করে এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ (ইআরআই)।

সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ বলেন, প্রতি বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ১০ লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। তাদের ৪০ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে কাজে যুক্ত হতে পারছেন। কেউ সরকারি, কেউ বেসরকারি খাতে চাকরি পাচ্ছেন। ২০ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট স্ব-উদ্ভাবিত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করছেন। আর অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ পুরোপুরি বেকার থাকছেন।

উপাচার্য বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাব, ডেমোনেস্ট্রেটর, শিক্ষক, অধ্যক্ষ সবই আছে। তবুও ল্যাব প্রাকটিক্যাল হচ্ছে না। এটা শুধু নৈতিক অবক্ষয়ের অবনমন। এর উত্তরণ ঘটাতে হবে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক প্রেরণ নিরুৎসাহিত করতে হবে। তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। এজন্য আধুনিক শিক্ষা কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি।

অধ্যাপক আমানুল্লাহ বলেন, বিগত ৫২ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রের কোনো গুণগত উন্নতি হয়নি। আমরা বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের অবস্থা একসময় বাংলাদেশের মতোই ছিল। কিন্তু আজ সেই দেশগুলোর মাথাপিছু আয় বহুগুণে বেড়েছে। আর এজন্য চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার বড় অবদান রয়েছে।

সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, দেশে ডিগ্রি পাস শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর ১১ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪ দশমিক ৫ শতাংশই বেকার। তাই জব মার্কেটের (চাকরির বাজার) চাহিদা অনুযায়ী নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করতে হবে।

জাবি উপাচার্য বলেন, গুণগত শিক্ষার অভাবই শিক্ষার সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতি বছর এসএসসিতে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও বাস্তব শিক্ষার উন্নতি হচ্ছে না। প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু যারা জিপিএ-৫ পায় না, তারা কোথায় যাচ্ছে; তা নিয়ে গবেষণা জরুরি।

অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে সহায়ক ভূমিকা রাখলেও মূল দায়িত্ব পালন করেছে চীন, রাশিয়া ও জাপানের প্রকৌশলীরা। অথচ স্থানীয় প্রকৌশলীরা দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছে। মূল সমস্যা হলো চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার অভাব।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস প্রমুখ।

Share:

Related News

Get Every Newsletter

We are not gonna make spamming

BACK TO TOP