কীভাবে দ্রুত দূর করবেন ত্বকের স্ট্রেচ মার্ক

By Sub Editor

আপনার ত্বকের ওপর আঁকা সেই সাদা বা বেগুনি-গোলাপি দাগগুলো কি আপনাকে আত্মবিশ্বাসে চির ধরায়? গর্ভাবস্থার পর, ওজন দ্রুত কমার পর, বা কৈশোরে হঠাৎ দ্রুত বৃদ্ধির সময় সৃষ্টি হওয়া এই স্ট্রেচ মার্কস শুধু দাগই নয়, অনেকের জন্য মানসিক কষ্টেরও কারণ। বাজারে নানা রঙের টিউব, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, আর ‘চমৎকার ফলাফল’-এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভরা অসংখ্য স্ট্রেচ মার্কস দূর করার ক্রিম। কিন্তু প্রশ্নটা আসলে এখানেই – এই ক্রিমগুলো কি সত্যিই কাজ করে? নাকি শুধুই প্রত্যাশার ফাঁদ? এই লেখাটি শুধু আরেকটি ক্রিমের তালিকা নয়। এটি আপনার জন্য একটি সতর্ক, তথ্যভিত্তিক ও সমবেদনাপূর্ণ গাইড। আমরা দেখবো স্ট্রেচ মার্কসের বিজ্ঞান, ক্রিমগুলোর সত্যিকারের ক্ষমতা, তাদের সীমাবদ্ধতা, এবং কোন পথগুলোতে হাঁটলে আপনি পেতে পারেন কিছুটা স্বস্তি ও উন্নতি। আপনার কষ্টটা আমরা বুঝি, আর সেজন্যেই সত্যিটা জানা জরুরি।

স্ট্রেচ মার্কস আসলে কী? কেন হয়? ত্বকের গভীরে এক ঝলক (Stretch Marks Ki? Ken Hoy?)

স্ট্রেচ মার্কসকে শুধু ‘দাগ’ ভাবলে ভুল হবে। এগুলো আসলে স্কার টিস্যু বা দাগের টিস্যু। ত্বকের গভীরতম স্তর, ডার্মিসে যখন অতিরিক্ত টান পড়ে, তখন সেখানকার কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবারগুলো ছিঁড়ে যায়। এই কোলাজেন আর ইলাস্টিনই ত্বককে টানটান ও স্থিতিস্থাপক রাখে। যখন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শরীর সেটা মেরামত করতে ছুটে আসে। কিন্তু এই মেরামত প্রক্রিয়াটি অনেক সময় পুরোপুরি নিখুঁত হয় না। ফলে সৃষ্টি হয় সেই চিরপরিচিত দাগ, যাকে আমরা স্ট্রেচ মার্কস বা ত্বকের ভাঁজ বলি। শুরুর দিকে এই দাগগুলো গোলাপি, লাল বা বেগুনি রঙের হয় (Striae Rubra), কারণ তখন রক্তনালীগুলো দৃশ্যমান থাকে। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে রঙ ফ্যাকাশে হয়ে সাদা বা রূপালি আভা নিয়ে আসে (Striae Alba), এবং দাগগুলো ত্বকের স্বাভাবিক রেখার মতোই অনুভূত হয়, তবে অনেক সময় কিছুটা ডেবে যেতে পারে।

স্ট্রেচ মার্কস হওয়ার প্রধান কারণগুলো:

  • গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় পেট, স্তন, নিতম্বে দ্রুত প্রসারণের কারণে স্ট্রেচ মার্কস খুবই সাধারণ। প্রায় ৫০-৯০% গর্ভবতী নারীই এটা অনুভব করেন (সূত্র: American Academy of Dermatology Association – AAD)।
  • দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস: হঠাৎ করে অনেক ওজন বেড়ে গেলে বা খুব দ্রুত ওজন কমালে ত্বক প্রসারণ বা সংকোচনের সাথে তাল মেলাতে পারে না।
  • বয়ঃসন্ধিকাল: কিশোর-কিশোরীদের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি, বিশেষ করে উঁচু হওয়া বা শরীরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত পরিবর্তনের কারণে।
  • পেশী গঠন (বডি বিল্ডিং): খুব দ্রুত পেশীর ভর বাড়ানোর চেষ্টা করলে।
  • জিনগত প্রবণতা: পরিবারে কারো স্ট্রেচ মার্কস থাকলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি একটি বড় ফ্যাক্টর।
  • কিছু চিকিৎসা বা রোগ: দীর্ঘমেয়াদি কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম বা ওরাল ওষুধ সেবন, কুশিং সিনড্রোম, মারফান সিনড্রোম ইত্যাদি।
  • স্তন বৃদ্ধি সার্জারি: হঠাৎ স্তনের আকার পরিবর্তনের কারণে।
  • কেন ক্রিম দিয়েই পুরোপুরি দূর করা এত কঠিন? (Ken Cream Diyei Puropur Dur Kora Eto Kothin?)

    এখানেই স্ট্রেচ মার্কস দূর করার ক্রিম-এর সীমাবদ্ধতার মূল কারণ লুকিয়ে। ক্রিমগুলো প্রাথমিকভাবে কাজ করে ত্বকের সবচেয়ে উপরের স্তরে (এপিডার্মিস)। কিন্তু স্ট্রেচ মার্কসের ক্ষতি ঘটে তারও অনেক গভীরে, ডার্মিসে, যেখানে কোলাজেন ও ইলাস্টিনের ছিঁড়ন ঘটে। বেশিরভাগ ক্রিমের উপাদান গভীর ডার্মিসে পৌঁছাতে এবং সেখানে যথেষ্ট ঘনত্বে কাজ করাতে সক্ষম হয় না। ক্রিমের প্রভাব প্রায়শই হয় পৃষ্ঠতলীয় – ত্বককে আর্দ্র, নরম ও মসৃণ রাখা, দাগের রঙ কিছুটা হালকা করা (বিশেষ করে নতুন লাল দাগের ক্ষেত্রে), কিন্তু অন্তর্নিহিত স্কার টিস্যুকে সম্পূর্ণরূপে ‘ঠিক’ করে তোলা নয়। এটি মেরামতের চেয়ে প্রতিকারের কাছাকাছি।

Share:

Related News

Get Every Newsletter

We are not gonna make spamming

BACK TO TOP