সর্বশেষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

শরীরে বিড়াল-কুকুর খামচি বা কামড় দিলে মৃত্যু নিশ্চিত

জলাতঙ্ক। একে হাইড্রোফোবিয়া কিংবা পাগলা রোগও বলা হয়। আক্রান্ত রোগী পানি দেখে বা পানির কথা মনে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে এই রোগের নাম হয়েছে জলাতঙ্ক। এটি প্রাণিবাহিত র‌্যাবিস ভাইরাসঘটিত রোগ, রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

বিশ্বে প্রতি ১০ মিনিটে একজন এবং প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। বাংলাদেশেও বছরে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন জলাতঙ্কে। শুধু মানুষই নয়, প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশুও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে থাকে দেশে।

জলাতংক আক্রান্ত প্রানী সংস্পর্শে আসলে করণীয়

কুকুর কামড়ানোর জায়গায় প্রথমেই কাপড়কাচার সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ক্ষার যুক্ত সাবান দিয়ে প্রবহমান পানিতে ফেনা ফেনা করে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধুয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

কামড় যদি গভীর হয় বা যদি রক্ত বের হয় তবে, ক্ষতস্থানের পাশে রেইবিজ ইমিউন গ্লবিউলিন বা আরআইজি ভ্যাকসিন দিতে হয়। পাশাপাশি অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিনও দিতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত বুকের উপর কামড় বা আঁচড়ের দাগ দেখা যায়। কারণ তাদের উচ্চতা আর কুকুরের উচ্চতা কাছাকাছি। তবে, ঘাড়ের কাছে কামড় কিংবা আঁচড় লাগলে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দিতে হবে।

কুকুর কিংবা বিড়াল কামড়ালে অনেকে বাটিপড়া, চিনিপড়া, মিছরিপড়া ইত্যাদি করে থাকেন।

অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিন দেওয়ার সময়সূচি

প্রথম দিন ভ্যাকসিন দেওয়ার পর তৃতীয় দিন, দ্বিতীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে। এরপর যথাক্রমে ৭ম, ১৪তম ও ২৮তম দিনে মোট ৫টি ভ্যাকসিন দিতে হয়।

সাধারণত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হয়। অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। সরবরাহজনিত ঘাটতির ফলে কখনও ভ্যাকসিন দিতে দেরি হলে মহাখালী সরকারি সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রোগীদের যোগাযোগ করতে দেখা গেছে।এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা বিভাগ চালু আছে।

ভ্যাকসিনের ডোজ : ইনজেকশন প্রথম দিন দেয়ার পর তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ডোজ, সাত দিনে তৃতীয় ডোজ, ১৪ দিনে চতুর্থ ডোজ, ২৮ বা ৩০ দিনে পঞ্চম ডোজ (অর্থাৎ ০, ৩, ৭, ১৪, ২৮ বা ৩০ দিনে) দিতে হবে।

টিকা বা ভ্যাকসিন না নিলে আক্রান্ত হতে পারেন এই প্রাণঘাতী রোগে

রোগের লক্ষণ

১। রোগটি শুরু হওয়ার দুই-চার দিন আগে মনে হবে সুচ বা পিন দিয়ে কেউ শরীরে আঘাত করছে।

২। ব্যথা অনুভব হবে এবং শরীর চুলকাবে। বিশেষ করে কামড়ের স্থানে এবং এটা স্নায়ু দ্বারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়াবে।

৩। হঠাৎ করে মানসিক পরিবর্তন যেমন অস্থিরতা, স্তব্ধতা, চুপচাপ, অবসাদ, জ্বরজ্বর ভাব হবে। পরিবারের প্রতি অবহেলা ও অমনোনিবেশ অথবা অতিরিক্ত সহানুভূতি বা ভালোবাসা দেখা দিবে।

শরীরে রোগ স্পষ্ট হলে 

জলাতঙ্ক হলে তিন ধরনের পরিবর্তন রোগীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

১ : স্পাস্টিক বা অতিমাত্রায় অস্থিরতা, স্পর্শ করলেই লাফ দিয়ে ওঠা, ভয় পাওয়া, শব্দ শুনলে অস্থির হওয়া, কোনো কিছু দেখলে চিৎকার দিয়ে ওঠা। মুখের ভেতরে, গলায় শ্বাসনালী, খাদ্যনালী সঙ্কোচন হয়। ফলে হাইড্রোফবিয়া হবে, যাকে বলে জলাতঙ্ক অর্থাৎ পানি পিপাসা লাগবে, কিন্তু পানি পান করতে পারবে না। পানির শব্দ, পানি কাছে আনলে ভয় পাবে। এ জন্য এই রোগকে জলাতঙ্ক রোগ বলে।

২ : ডিমেনশিয়া : রোগী পাগলের মতো ছটফট করবে। অস্থির হবে, ভাঙচুর করবে, ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলবে। এরপর অজ্ঞান হয়ে যাবে।

৩ : প্যারালাইটিক বা অবশ হয়ে যাওয়া। রোগ হওয়ার সাত থেকে ১০ দিন পর এ অবস্থা হবে। এ অবস্থা হওয়ার সাথে সাথে রোগী মারা যাবে।

চিকিৎসা : জলাতঙ্ক একবার হলে বাঁচার আর কোনো উপায় থাকে না। এমনকি কোনো চিকিৎসাও নেই। সুতরাং রোগী যেন আরামে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তার ব্যবস্থা করা। এ জন্য রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে সিমটেমেটিক চিকিৎসা দেয়া।

প্রতিষেধক

পোষা কুকুর বা বিড়ালকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়া হয়নি এমন পশুর কামড়ে মানুষ বা পশু আক্রান্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।

এছাড়া প্রত্যেক জেলাতেই পশু হাসপাতাল রয়েছে। পোষা প্রাণীর টিকা এসব হাসপাতালে পাওয়া যাবে

সূত্র : ইন্টারনেট, জাতীয় দৈনিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *