সর্বশেষ সাহিত্য

গল্প : যৌতুক || লেখক : ইকবাল হোসাইন

গল্প: যৌতুক

ছুটির দিন সকালে বউ আর আমি বসার রুমে বসে বাদাম চিবুচ্ছিলাম আর টিভিতে কিছু একটা দেখছিলাম। হটাৎ করে সিঁড়িতে ধুপধাপ আওয়াজ শুনে সে উঠে চলে গেল কি হয়েছে দেখার জন্য। কিছুক্ষন পর ফিরে আসার পর জিজ্ঞেস করলাম, কে এসেছে?

বউ বলল, পাশের ফ্লাটের ভদ্রলোকের শশুর এসেছেন।

আমি বললাম, আওয়াজ কিসের?

বউ বলল, তিনি কিছু ফার্নিচার নিয়ে এসেছেন, সেগুলো ওঠাচ্ছেন। তারপর সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলল, এখন তুমি নিশ্চয় বলবে, তোমার শশুর তো তোমাকে কিছু দেয় নাই।

আমি বললাম, তা বলবো কেন। আমার সবকিছুই আছে। জীবন ধারনের জন্য যা প্রয়োজন তার সব কিছু কিনেই তারপর তোমাকে ঘরে নিয়ে এসেছি। আমার কিছু প্রয়োজন নেই।

বউ বললো, তার মানে তোমার যদি কিছু প্রয়োজন থাকত, তাহলে চাইতে?

আমি বললাম, না থাকলেও চাইতাম না। নিজে কেনার চেষ্টা করতাম, আর কিনতে না পারলে মনে করতাম আমার এটা প্রয়োজন নেই।

বউ বলল, তুমি এখন একথা মুখে বলতেছ, কিন্তু আমার সাথে কোন কিছু নিয়ে ঝগড়া হলে, তখন বলবে, পাশের ফ্লাটের ভদ্রলোককে তার শশুর উপহার হিসেবে অনেক কিছু দিয়েছেন, আমাকে কিছু দেয় নাই।

আমি বললাম, তা বলবো কেন? অন্য কিছু বলবো।

বউ বলল, অন্য কিছু কি বলবে?

আমি বললাম, তখন ঝগড়ার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলবো।

আমার এই কথা সে মানতে পারলো না। তার কথা হলো আমি আজ না হয় কাল যে কোন একদিন যৌতুক হিসেবে কিছু না কিছু চাইব।

এদিকে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে। বাজার করতে হবে, তারপর জুম্মার নামাজে যেতে হবে।

আমি যতই বলি আমি কিছু চাই না, কখনো চাইবোও না, সে ততই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলে আমি কখনো না কখনো কিছু চাইবো।

আমি, আমাদের এই আলোচনাটাকে সমাপ্ত করার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে বললাম, ঠিক আছে, আমাকে তাহলে একটি মোটর সাইকেল উপহার দিতে বলো।

তারপর বউ আমার সামনে যৌতুকের অপকারিতা সম্পর্কে একটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিল আর আমি তা মনোযোগী স্রোতার মত শুনলাম এবং তার কথার সাথে একমত হয়ে বাজারে চলে গেলাম।

লেখক : ইকবাল হোসাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *