আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস থেকে ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন প্রশাসন। এর আগে, মার্কিন প্রশাসনের অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছিল ন্যাটোভুক্ত দুই দেশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এক চিঠিতে ড্যানিশ ও ডাচ প্রশাসনকে অনুমোদনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরপরই পাঠানো যাবে এ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান।

তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এফ-১৬ ফাইটার জেট পেলেই যে ইউক্রেনীয় সেনারা যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে ফেলতে পারবেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, ফাইটার জেট পরিচালনায় দক্ষ হয়ে উঠতে বেশ সময় লাগে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন এ বিমান শুধু ইউক্রেনী সেনাদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে সক্রিয় যুদ্ধবিমান হলো এফ-১৬। এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট এ বিমান স্থল ও আকাশ উভয়পথেই হামলা চালাতে সক্ষম। ১৯৭০ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে এ বিমান। মার্কিন বিমানবাহিনীর মতে, স্বল্প ব্যায়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র ব্যবস্থা এটি। কয়েক দশক ধরে হাজার হাজার এফ-সিক্সটিন তৈরি ও বিশ্বজুড়ে তা রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন মূলত মার্কিন বিমানবাহিনীর (ইউএসএএফ) একটি একক ইঞ্জিনের বহুভূমিকাযুক্ত যুদ্ধবিমান। প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার ৪১৪ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিমান বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো আবহাওয়ায় উড়তে ও আঘাত হানতে সক্ষম।

রাতের বেলাতেও একই শক্তিতে হামলা চালাতে পারে এটি। কামান, ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা বোমা সবরকম অস্ত্রই থাকে এতে। এফ ১৬ এর বাঁ দিকের ডানায় থাকে একটি ২০ এমএম এম-৬১ ভালকান কামান, যা প্রতি মিনিটে ৬ হাজার রাউন্ড গুলি ছুড়তে পারে। এটির অস্ত্র রাখার ক্ষমতাও অবিশ্বাস্য। ২১ হাজার ২৮২ কেজি বিস্ফোরক নিয়ে উড়তে পারে এ যুদ্ধবিমান।

রুশ বাহিনীর হামলা প্রতিহত করতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনীয় পাইলটদের এ বিমান চালানোর প্রশিক্ষণও দিচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনী। প্রশিক্ষণ শেষেই কিয়েভে পৌঁছাবে বিমানের প্রথম চালান।

ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পর থেকেই ইউক্রেনকে অস্ত্রসহ নানাবিধ সহায়তা দিয়ে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। এসব অস্ত্র দিয়ে কিয়েভ যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ সাফল্যও পাচ্ছে।

এদিকে, ইউক্রেনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির পাইলটদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চালানোর ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ ইউক্রেনের এসব পাইলট নিজ দেশে এ বিমান উড়ানোর সুযোগ পাবেন, সেই সময়সীমা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে, ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত বুধবার (১৭ আগস্ট) একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এটি নিশ্চিত যে আমরা এই শরৎ ও শীতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে ইউক্রেনকে রক্ষার সুযোগ পাবো না।

যুক্তরাষ্ট্র এখনই বিমান না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, এ বিমান নিয়ে আমাদের অনেক বড় আশা ছিল যে, এগুলো আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষার অংশ হবে। আমরা এসব বিমান দিয়ে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সন্ত্রাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *