আন্তর্জাতিক সর্বশেষ

২০ বছর পর ফেসবুকের পেইড সেবা: কেন ও কাদের জন্য?

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সেবাগুলো যারা ব্যবহার করেন, তারা খুব শিগগির টুইটারের মতো নিজেদের প্রোফাইলের সঙ্গে নীল রঙের ব্যাজ যুক্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে তাদের প্রোফাইল ‘ভেরিফাইয়েড’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে এর জন্য গ্রাহকদের প্রতি মাসে সাবস্ক্রিপশন ফি গুণতে হবে।

গতকাল রোববার ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ এ ঘোষণা দেন।

আজ সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে নতুন এই সেবার বিস্তারিত জানা গেছে।

এতে বলা হয়, আপাতত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে এই সেবা পাওয়া যাবে। প্রায় ২০ বছর বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার পর প্রথমবারের মতো জাকারবার্গ গ্রাহকদের অর্থের বিনিময়ে এই সেবা দিতে যাচ্ছেন।

২০০৪ সালে জাকারবার্গ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ফেসবুক চালু করেন। শুরুতে এটি শুধু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত ছিল।

গ্রাহকরা যে সুবিধা পাবেন

একজন ‘মেটা ভেরিফায়েড’ সেবা গ্রহণকারী ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে তার আইডি খুব সহজেই ভেরিফাই করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় পরিচয়পত্র।

পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের পর তার প্রোফাইলে নীল ভেরিফায়েড ব্যাজ যোগ হবে।

পেইড সার্ভিসের গ্রাহকদের ‘প্রো-অ্যাক্টিভ নিরীক্ষণ’ সেবা দেবে ফেসবুক। ফলে কেউ খুব সহজে তাদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করতে পারবে না।

কোনো সমস্যা দেখা দিলে গ্রাহকরা সরাসরি কাস্টমার কেয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। সাধারণ গ্রাহকরা এমন সেবা পান না। তাদের সামান্য সমস্যাতেও দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়।

পেইড সেবার গ্রাহকদের পোস্ট, ছবি ও ভিডিও সাধারণ গ্রাহকদের চেয়ে বেশি ভিউ পাবে এবং সার্চ রেজাল্ট, ফেসবুকের ধারা বর্ণনা ও সুপারিশে তাদের কন্টেন্ট প্রাধান্য পাবে।

এছাড়াও পেইড গ্রাহকদের নতুন ও সৃজনশীল সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মেটা। তবে এসব সেবার বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।

কারা এই সেবা পাবেন

এ সপ্তাহে প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে মেটা ভেরিফায়েড চালু হতে যাচ্ছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে পর্যায়ক্রমে এই সেবা চালু হবে।

ওয়েব ব্রাউজারে এই সেবা পেতে মাসে ১১ ডলার ৯৯ সেন্ট খরচ হবে। মোবাইলে ব্যবহার করতে চাইলে গুণতে হবে ১৪ ডলার ৯৯ সেন্ট। অ্যাপল ও গুগল তাদের আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড সেবার জন্য মেটার কাছ থেকে যে কমিশন নেয়, তা যোগ হওয়ায় মোবাইলে এ সেবার খরচ বেড়েছে।

পেইড সেবা ব্যবহারের বিষয়টি ঐচ্ছিক। তবে অন্তত ১৮ বছর বয়স না হলে এ সেবা ব্যবহার করা যাবে না। এ মুহূর্তে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই সেবা উন্মুক্ত নয়—শুধু ব্যক্তিগত প্রোফাইলের জন্যই এটি প্রযোজ্য।

তবে ভবিষ্যতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেও এর আওতায় আনা হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

মূলত যারা ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করেন, তাদের উদ্দেশ্যেই এই সেবা চালু করেছে মেটা।

মেটা জানিয়েছে, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের কাছ থেকে বারবার অনুরোধ আসায় তারা এই সেবা চালু করেছেন। মেটার মতে, এই সেবা ব্যবহারে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের ব্যবসা অনেক বেড়ে যাবে।

কেন চালু হলো পেইড সাবস্ক্রিপশন

সম্প্রতি প্রথাগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রাজস্ব আয় ও গ্রাহক সংখ্যা কমেছে।

২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মেটার রাজস্ব কমে।

মূল্যস্ফীতির কারণে অনলাইন বিজ্ঞাপন কমেছে এবং গ্রাহকরা এখন অনেক ধরনের অ্যাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এছাড়াও, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মেটা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যে আগের মতো অবাধ প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন না। অ্যাপল এ বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। ফলে ‘টার্গেটেড বিজ্ঞাপনেও’ দেখা দিয়েছে জটিলতা।

এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের আকর্ষণ ও ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এক বিশ্লেষকের মতে, যে প্ল্যাটফর্মে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় কন্টেন্ট থাকবে, সেখানেই গ্রাহকরা ভিড় জমাবেন।

শুধু মেটাই তাদের সেবার জন্য অর্থ চাচ্ছে, বিষয়টি এরকম নয়। স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট ও ডিসকর্ডও প্রতি মাসে বাড়তি সেবার জন্য গ্রাহকদের কাছে স্বল্প পরিমাণ অর্থ নিতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি টুইটার অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন সেবা চালু করেছে। এর জন্য ৭ ডলার (ওয়েব) ও ১১ ডলার (আইফোনে) মাসিক ফি চাওয়া হচ্ছে।

আগামীতে হয়তো অনেক জনপ্রিয় ও প্রচলিত সেবাই বিনামূল্যের গ্রাহকদের কাছ থেকে সরে যাবে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকরা নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দিকেও ঝুঁকতে পারেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *