বিদ্যালয় বার্তা সর্বশেষ

মতিঝিল আইডিয়ালের সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত ১১ বছরে অবৈধভাবে ৪৫৫ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন ছাড়াই ইচ্ছামতো শাখা খুলে এ নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মানা হয়নি কোনো বিধি। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অনেকের বৈধ নিবন্ধন সনদও নেই। কয়েকজনের নিবন্ধন সনদ থাকলেও তার মেয়াদ শেষ। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ কিনে এনে অনেকে বনে গেছেন নামি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষক।

২০১১-১২ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ওই নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ অবৈধ হওয়াদের মধ্যে মতিঝিল শাখার ৩৪৬ শিক্ষক ও একজন ল্যাব সহকারী আছেন। বনশ্রী শাখার ৫৫ শিক্ষক ও ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুগদা শাখার ১৫ শিক্ষক ও ২৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয়মাসের জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হলেও সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তারা।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) অডিটে উঠে এসেছে শিক্ষক নিয়োগের এসব অনিয়মের তথ্য। অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি এ অডিট করে। অডিট প্রতিবেদনের কাজ শেষ হয় গত ১২ অক্টোবর। এরপর ১৬ অক্টোবর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে ৪০০ শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিল এবং এ পর্যন্ত তাদের তোলা বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়মের কারণে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এমপিও বাতিল, পরিচালনা কমিটির (গভর্নিং বডি) সভাপতির পদ শূন্য করাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

মূল শাখায় ৩৪৬ জনের নিয়োগ অবৈধ

অডিট প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন শাখার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে ৫৯ জন শিক্ষক ও চারজন ল্যাব সহকারী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এরপর ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ মে’র মধ্যে ১১১ শিক্ষক ও একজন ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তিতে থাকা শূন্যপদের চেয়েও অতিরিক্ত ৪২ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ হলেও তারা সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন। নিয়োগের পর তাদের বেতন স্কেল ধরা হয় আট হাজার টাকা। অথচ প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের স্কেল হওয়ার কথা ছয় হাজার ৪০০ টাকা।

বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত পদে শিক্ষক এবং ল্যাব সহকারী নিয়োগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের (ডিজি) কোনো প্রতিনিধিও রাখেনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি। এমনকি নিয়োগ বোর্ড গঠনের রেজ্যুলেশনও গোপন রাখা হয়। সম্পূর্ণ স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলেও ১১ বছরেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। অথচ তারা চাকরি করে যাচ্ছেন।

অডিটে আরও উঠে এসেছে, ২০১১ সালের ১৪ মে রেজ্যুলেশন অনুযায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের কারও কারও নিবন্ধন সনদ ছিল না। কারও আবার নিবন্ধন সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ। কিন্তু তাদের নাম বা তথ্য রাখা হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য অ্যাডহক কমিটি থাকাকালে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে অ্যাডহক কমিটি থাকাকালে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

এরপর ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ ১৪২ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে নিয়োগ কমিটি না করে করা হয় উপকমিটি। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের নিবন্ধন বা ইনডেক্স নম্বর লেখা ছিল না। ফলে এ নিয়োগও বিধিসম্মত হয়নি। এছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৮৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *