আন্তর্জাতিক

মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশ ভ্রমণের কৌশল

মার্কিন ডলারের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এবং বিনিময় হারের ওঠানামায় বিদেশগামী বাংলাদেশি যাত্রীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মার্কিন ডলারের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আপনার কি দেশের বাইরে বেড়ানোর পরিকল্পনা বাদ দেওয়া উচিত? এই ডলার সংকট মোকাবিলা করার কি কোনো উপায় আছে? এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আপনার মাথায়। চলুন, দেখে নেওয়া যাক মার্কিন ডলার না কিনেও বিদেশ ভ্রমণের কিছু বিকল্প উপায়।

মার্কিন ডলার কেনার বিকল্প কেন মাথায় রাখা উচিত

বিদেশ ভ্রমণ একদিকে যেমন আনন্দের ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে; তেমনি এটি ব্যয়বহুলও। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সবচেয়ে বড় খরচ হলো বাংলাদেশি টাকাকে আপনি যে দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, সেই দেশের মুদ্রায় রূপান্তর করার খরচ। তবে ভ্রমণকারীরা সাধারণত যেকোনো দেশে যাওয়ার সময় মার্কিন ডলার সঙ্গে রাখেন।

মার্কিন ডলারের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে বেইজ কারেন্সির তোয়াক্কা না করে বিনিময় হারকে উচ্চ করে তুলেছে। তাই ভ্রমণকারীদের বিকল্প উপায়গুলো বিবেচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ ও সাশ্রয়ী হবে।

মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণের উপায়

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন

বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক কার্ডের (ডলার-সমর্থিত ভিসা/মাস্টারকার্ড) মাধ্যমে ডলার নেওয়ার পরামর্শ দেয়। ক্রমবর্ধমান বিনিময় হার এবং ব্যাংক ও খোলা বাজারে সরবরাহ ঘাটতির কারণে তারা এই পরামর্শ দিয়েছে। খোলাবাজারে নগদ ডলারের দামের সঙ্গে বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবধান ১০ টাকার বেশি।

আপনার ক্রেডিট কার্ডে ডলার অনুমোদন (এনডোর্স) করা সাশ্রয়ী। বর্তমান পরিস্থিতিতে এতে আপনার প্রতি মার্কিন ডলারে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ টাকা সাশ্রয় করতে পারে। তবে বর্তমানে নগদ ও কার্ড অনুমোদনের বিনিময় হার একই ১০৬ টাকা (১২ জানুয়ারি পর্যন্ত)।

২০২২ সালের আগস্ট মাসের একটি খবর অনুযায়ী, খোলা বাজারে তখন ১ ডলার কিনতে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত খরচ হতো, অন্যদিকে ব্যাংক বা কার্ডের মাধ্যমে ডলার কিনতে ৯৫ টাকা লাগতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সে সময় গণমাধ্যমকে বলেন, “এ কারণেই আমরা ভ্রমণকারীদের পরামর্শ দিচ্ছি যে তারা তাদের ব্যাংক থেকে নগদ টাকার পরিবর্তে ট্রাভেল কার্ড দিতে অনুরোধ করুন। যাতে তাদের কম টাকা খরচ হয়।”

আপনার ভ্রমণ গন্তব্যের স্থানীয় মুদ্রা কিনুন

আপনি যে দেশে ভ্রমণ করছেন সেখানকার স্থানীয় মুদ্রা কেনা আপনার বিনিময় খরচ কমাতে পারে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন মুদ্রার বিনিময় হারও বেড়েছে।

তাই আপনি পরীক্ষা করতে পারেন যে আপনার গন্তব্য দেশের মুদ্রা কেনার খরচ কমছে কি-না। যে দেশে ভ্রমণ করছেন মুদ্রা কেনার আগে তাদের মুদ্রানীতি অনুযায়ী বাইরে থেকে কেনা বৈধ কি-না তা জেনে নিন।

ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবহার করুন

অনেক দেশ এখন ডিজিটাল ওয়ালেট গ্রহণ করে। এই ধরনের লেনদেন চলে এমন কোনো দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে আপনার মুদ্রাকে সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরের প্রয়োজন পড়বে না। একটি তৃতীয় পক্ষের পরিষেবা ব্যবহার করে আপনি মুদ্রা লোড করতে পারবেন।

বিদেশি এটিএম এর সুবিধা নিন

আপনি যখন অন্য কোনো দেশে থাকেন, তখন এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলা, ব্যাংক বা কারেন্সি এক্সচেঞ্জের দোকানে কারেন্সি কনভার্ট করার চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী হতে পারে। আপনার যদি বাংলাদেশ থেকে ডলার-সমর্থিত কার্ড থাকে, তাহলে আপনি স্থানীয় এটিএম ব্যবহার করে যে দেশে ভ্রমণ করছেন সেখানে টাকা তুলতে পারবেন।

তবে, আপনি যে দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন সেখানে আপনার কার্ড কাজ করবে কি-না তা নিশ্চিত করতে আপনার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং বিদেশি এটিএম ব্যবহার করার জন্য ফি আছে কি-না তা জেনে নিন।

যেভাবে ঢাকা থেকে গন্তব্য দেশের মুদ্রা কিনবেন

ঢাকায় সরকারি-নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জের অনেক দোকান রয়েছে। আপনি আপনার টাকা পছন্দসই মুদ্রার সঙ্গে বিনিময় করতে পারেন এবং আপনার পাসপোর্টে এটি অনুমোদন করতে পারেন। এইভাবে, আপনি বৈধভাবে আপনার গন্তব্য দেশের মুদ্রা নিতে পারেন।

সেখানে পৌঁছানোর আগে একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রা কেনা অর্থনৈতিক এবং একটি ব্যবহারিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ ভাল।

অর্থনৈতিকভাবে, স্থানীয় মুদ্রা আগে থেকে কেনা থাকলে মুদ্রার ওঠানামা এবং মুদ্রা সংকট থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, তাহলে স্থানীয় মুদ্রা হাতে থাকলে এই পরিবর্তনের আর্থিক প্রভাব হ্রাস পাবে।

একইভাবে, মুদ্রা সংকটের ক্ষেত্রে স্থানীয় মুদ্রা থাকা আপনাকে মুদ্রার অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে পারে।

এছাড়া ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে, স্থানীয় মুদ্রা হাতে থাকা ভ্রমণকে অনেক সহজ এবং আরও সুবিধাজনক করে তুলতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, অনেক দোকান বৈদেশিক মুদ্রা বা ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে না এবং স্থানীয় মুদ্রা থাকলে পণ্য ও পরিষেবার জন্য অর্থ প্রদান করা সহজ হয়।

যেভাবে আপনার আন্তর্জাতিক ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদন করবেন

আপনি ইস্যুকারী ব্যাংক থেকে আপনার কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদন করতে পারেন। তবে, আপনার অনুমোদন পরিষেবার জন্য একটি বৈধ পাসপোর্ট প্রয়োজন হবে। আপনি আপনার ব্যাংকে গিয়ে অনুমোদনের জন্য জিজ্ঞাসা করতে পারেন। ব্যাংক কোনো ঝামেলা ছাড়াই এটা করবে।

তবে এই পরিষেবাটি পেতে আপনার কাছে একটি দ্বৈত মুদ্রা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড আছে তা নিশ্চিত করুন। এখন, বেশিরভাগ ব্যাংক দ্বৈত মুদ্রা কার্ড অফার করে। আপনার কাছে দ্বৈত মুদ্রার কার্ড না থাকলে, আপনি আপনার ব্যাংক থেকে এটি পেতে পারেন।

যাইহোক, আপনার কার্ডে সীমাহীন মুদ্রা থাকতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০ সালে প্রবর্তিত নতুন আইনে বলা হয়েছে যে একজন ব্যক্তি এক ক্যালেন্ডার বছরে সর্বাধিক ১২ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অনুমোদন করতে পারেন।

২০২০ সাল থেকে প্রাপ্তবয়স্করা প্রতি বছর ১২ হাজার মার্কিন ডলার অনুমোদন করতে পারে এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরা এর অর্ধেক বা ৬ হাজার মার্কিন ডলার অনুমোদন করতে পারে।

পরিশেষে

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন পণ্য, সেবা ও সুযোগ-সুবিধার দাম বাড়ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভ্রমণ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে, মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশ ভ্রমণের কিছু উপায়ের পরামর্শ দেওয়া হলো।

এই পদ্ধতিগুলোর একটি বা কয়েকটি ব্যবহার করে আপনি আপনার মুদ্রা রূপান্তর করার খরচ কমাতে পারেন এবং আপনার ভ্রমণে ব্যয় করার জন্য আরও অর্থ বাড়াতে পারেন। তবে, আপনার ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি প্রযোজ্য ফি বা বিধিনিষেধ সম্পর্কে জানতে পারেন। ২০২৩ সালে আপনার ভ্রমণ শুভ হোক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *