আন্তর্জাতিক সর্বশেষ

প্রেমিককে জীবিত রেখেই তার বুকে সেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করবেন ডাচ তরুণী

ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের অনুমতি পেয়েছেন জোরায়া টার বিক (২৯) নামে এক তরুণী। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর আবেদন করেন তিনি। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করবেন তিনি। জোরায়া বিক মানসিক রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে সবসময় বিষণ্নতা, হতাশা, ভয় কাজ করে। এ কারণে ইচ্ছে করে তিনি দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে চান।

নেদারল্যান্ডসে ২০০২ সাল থেকেই স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের আইন রয়েছে। তবে স্বেচ্ছায় মৃত্যবরণে যারা আগ্রহ দেখান তাদের কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কীভাবে মৃত্যু হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় এটি সম্পন্ন করা হবে সেটি নিজেই জানিয়েছেন এই তরুণী।

তিনি বলেন, প্রথমে ঘুমের ওষুধ দিয়ে শুরু করব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি কোমাতে না যাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে হার্টের কার্যকারিতা বন্ধের ওষুধ দেয়া হবে না।

‘আমার জন্য বিষয়টি এমন হবে যেন আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। আমার পার্টনার (প্রেমিক) আমার সঙ্গে সেখানে থাকবে। তবে তাকে আমি বলেছি আমার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সে চাইলে বাইরে বের হয়ে যেতে পারবে।’

মৃত্যুর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে এ তরুণীর বাড়িতেই চিকিৎসক আসবেন।

তিনি জানিয়েছেন, মৃত্যুর কথা চিন্তা করলে তার ভয় লাগে। অপরদিকে পরিবারের কথা চিন্তা করলে খারাপ লাগে। তবে তিনি সব জেনে বুঝেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি চাইলে যে কোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেন।

টার বিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, ‘লোকে মনে করে মানসিকভাবে অসুস্থ কেউ ঠিকমতো চিন্তা করতে পারে না। এই ভাবনা অপমানজনক। …কেউ কেউ মনে করেন, কিছু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য চাপে রাখা হয় কিনা। কিন্তু নেদারল্যান্ডসে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এ আইন আছে। নিয়মকানুনগুলো ভীষণ কড়া, এবং সত্যিকার অর্থেই নিরাপদ।’

টার বিকের কষ্টের শুরুটা শৈশবেই। তিনি ক্রনিক ডিপ্রেশন (দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা), উদ্বেগ, ট্রমা ও আনস্পেসিফাইড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। তার অটিজমও রয়েছে।

প্রেমিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর টার বিক ভেবেছিলেন তার সঙ্গে নিরাপদে থাকতে থাকতে একসময় তিনি সেরে উঠবেন। তবে নাকি ফল হয়নি। উল্টো তার ভেতরে আত্মহত্যাপ্রবণতা আরও বাড়তে থাকে।

৩০ সেশনেরও বেশি ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নিয়েছেন তিনি। কিন্তু থেরাপিতে বিক টার নিজের সম্পর্কে, নিজের মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে অনেককিছু জানলেও তাতে ‘মূল সমস্যার সমাধান হয়নি’।

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার শুরুতে মনে আশা জাগে। ভেবেছিলাম আমি ভালো হয়ে যাব। কিন্তু চিকিৎসায় যত সময় গড়াতে লাগল, আমি ততই আশা হারাতে শুরু করলাম।’

১০ বছর পরে চিকিৎসার আর ‘কিছুই বাকি নেই’। বিক টার বলেন, ‘আমি জানতাম, এখন যেভাবে বেঁচে আছি, তাতে টিকে থাকতে পারব না।’

বিক টার আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু স্কুলের এক বন্ধুর ভয়াবহ আত্মহত্যা এবং তার পরিবারের ওপর ওই ঘটনার প্রভাবের কথা মনে করে আত্মহনন থেকে বিরত থাকেন তিনি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *