আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি গনহত্যাকে রাজনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় সাত মাস ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এমন অবস্থায় গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যাকে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস।

এমনকি মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে বলেও অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি। রোববার (২১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বলে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ গত শনিবার জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের ভেটো কার্যকরভাবে তেল আবিবের কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করছে।

আনাদোলুর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রতারণামূলক, যদিও দেশটি বলে, তারা বেসামরিক লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না, তবে এটি তাদের একটি কৌশল। গাজায় নিহত সমস্ত বেসামরিক নাগরিক, হাজার হাজার শহীদ, মার্কিন অস্ত্র, মার্কিন রকেট, মার্কিন রাজনৈতিক সুরক্ষায় নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর অর্থ কী? এর মানে হলো- গাজায় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেছেন, জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ সদস্যপদে মার্কিন ভেটো এটিই দেখায় যে- ওয়াশিংটন ইসরায়েলি অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের বিরোধিতা করছে।

রাফাহতে সামরিক অভিযান গণহত্যার দিকে যেতে পারে

এদিকে হানিয়াহ রাফাহ শহরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমি সমস্ত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশকে, আমাদের মিসরের ভাইদের, আমাদের তুরস্কের ভাইদের, আমাদের কাতারের ভাইদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে (ইসরায়েলি) আগ্রাসনকে দমন করতে এবং রাফাহ শহরে অভিযান প্রতিরোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং সেইসাথে গাজা উপত্যকা থেকে (ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজায় হামলার সমাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধের কথা বলতে গিয়ে হানিয়াহ বলেন: ‘যদি জায়নবাদী শত্রু রাফাহতে প্রবেশ করে, ফিলিস্তিনি জনগণ সাদা পতাকা উত্তোলন করবে না। রাফাহ-এর প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিজেদের রক্ষা করতে এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত।’

ইসরায়েলের সাথে আলোচনা

কেন তারা ইসরায়েলের সাথে আলোচনা করতে রাজি হয়েছিলেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে হানিয়াহ বলেন, ‘আমরা আলোচনায় রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু এই শর্তে যে- ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করা হবে।’

‘আমাদের শর্ত হচ্ছে- এই আলোচনার ফলে অবশ্যই একটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সম্পূর্ণভাবে সৈন্য প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তন এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি হতে হবে।’

‘আমাদের শর্ত হচ্ছে- এই আলোচনার ফলে অবশ্যই একটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সম্পূর্ণভাবে সৈন্য প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তন এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি হতে হবে।’

মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দাখিল করা কয়েক ডজন প্রস্তাব নিয়ে এ পর্যন্ত সমস্ত আলোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়নি বলে অভিযোগ করে হানিয়াহ বলেন: ইসরায়েল যা চায় তা হলো- বন্দিদের ফিরিয়ে নেওয়া এবং তারপর গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা। এটা সম্ভব নয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। ইসরায়েলও চায় না বাস্তুচ্যুত মানুষ উত্তর গাজায় ফিরে আসুক। তারা (ইসরায়েল) কেবল সীমিত পরিসরে এবং ধীরে ধীরে মানুষকে ফিরে আসতে দিতে চায়। এটা অগ্রহণযোগ্য।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েল বন্দি বিনিময়ের জন্য অল্প সংখ্যক লোকের প্রস্তাব দিচ্ছে। যদিও গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীর এবং গাজা থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *