জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, শিক্ষার্থীদের শুধু চাকরি পাওয়ার উপযোগী করে তোলা নয়, তাদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ কারণে দক্ষতাভিত্তিক বিভিন্ন কোর্স চালু করতে যাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ক্রাউন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (সিআইবিটি) আয়োজিত ‘প্রফেশনাল কোর্সের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য।
উপাচার্য বলেন, শুধু একটি চাকরির জন্য লেখাপড়া করা চলবে না। ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীকে অন্ট্রাপ্রেনার হিসেবে গড়ে তোলে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রগতির চাকাকে পাল্টে দিতে চাই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা আছে, থাকবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সংগ্রামমুখর জীবন পার করতে হয়। হয়তো কেউ কেউ সচ্ছল পরিবারেরও আছেন। কিন্তু হাওর, বাঁওড় ও পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করে। এসব শিক্ষার্থী নিজের টিউশনের টাকা নিজেই উপার্জন করছে। শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে পরিবারের জন্য আর্থিক সংস্থান করছে। এভাবেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। এই অংশ চাইলেই একদিনে হঠাৎ করে বিদেশে ভর্তি হতে পারে না। প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না। অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সরকারি যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে সেগুলো পায় না। তাই তাদেরকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগোতে হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভুঁইয়া প্রমুখ। এছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ মো. মামুনুর রশীদসহ কলেজের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘যে মোবাইলটি হাতে নিয়ে তোমরা ঘুরছ, সেটি দিয়ে শুধু ফেসবুক চালাবে তা নয়, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার, সফ্টওয়্যার সম্পর্কে জানবে। ই-বুক, ই-জার্নালে ঢুকবে। এসব টেকনোলজির মাধ্যমে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ফেসবুক, ইউটিউব, গান শোনায় দিনে ১ ঘণ্টা ব্যয় করতে পার, কিন্তু নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য পড়ালেখায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ব্যয় করতে হবে। অন্যথায় চার বছর পর দেখবে সময় শেষ, কিন্তু নিজেকে তৈরি করা যায়নি।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, চার বছরের শিক্ষাবর্ষে গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ভালো কাজে লাগাতে পারলে একজন মানুষ তার জীবনে আমূল পরিবর্তন করতে পারে। এই সময়ে একজন মানুষ নিজেকে এমন জায়গায় দাঁড় করাতে পারে যিনি পরিবার, সমাজ বদলাতে পারে। পৃথিবীর সব জায়গায় আমাদের মেধাবীদের বিচরণ নিশ্চিত করতে হবে। তারা যেন দেশ মাতৃকার সুরক্ষায়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, অসাম্প্রদায়িক মনোভাবকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস রাখতে হবে। নতুন জীবনের অনুসন্ধান করতে হবে। নতুন পৃথিবীতে সমতা আনতে হবে। তাহলেই তোমাদের সাফল্যে আমাদের অনাগত শিক্ষার্থীরা আস্থা খুঁজে পাবে।