জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি অনার্স ও মাস্টার্স কলেজগুলোতে যোগদান করে বিপাকে পড়েছেন সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক। চাকরিতে যোগদানের পর থেকে প্রায় বিনা বেতনে পাঠদান করতে হচ্ছে তাদের। বেতনভাতার দাবিতে বারবার আন্দোলন করেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। তাই হতাশ হয়ে ফের আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই শিক্ষকেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে ১৯৯৩ সালে বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করার অনুমতি দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অভ্যন্তরীণ আয় থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান করবে এমন শর্তে গত ৩০ বছরে প্রায় ৬০০ কলেজকে দেওয়া হয়েছে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের অনুমোদন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষক (অনার্সের জন্য পাঁচজন এবং মাস্টার্সের জন্য আরো পাঁচজন) নিয়োগ হয়েছে এ ধরনের ডকুমেন্ট এবং অন্যান্য বিষয় যাচাই-বাছাই করে কলেজে অনার্স বা মাস্টার্স চালুর অনুমতি দিলেও শিক্ষকরা কী হারে বেতন পান বা আদৌ বেতন পান কি না তা যাচাই করে না।
প্রভাষক হিসেবে জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে যোগদান করেন। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ কলেজ অনার্স ও মাস্টার্স প্রগ্রামে কর্মরত শিক্ষকদের উক্ত স্কেলে বেতন প্রদান না করে তার চেয়ে অনেক কম হারে বেতন প্রদান করে থাকে এবং ক্ষেত্র বিশেষে অনেক কলেজ তাও দেয় না।
বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষকরা জানান, বেসরকারি কলেজগুলোতে যোগদান করে তারা প্রতারিত হয়েছেন। অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা জনবল কাঠামো বা সরকারি নীতিমালাতে অন্তর্ভুক্ত নয় এই অজুহাতে তাদেরকে তিনদশক ধরে বেতনবঞ্চিত রাখা হয়েছে।
তাদের দাবি, ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২১ সালে জনবল কাঠামো সংশোধন করা হলেও বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজের শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা জানান, শিক্ষকদের বেতনের নাম করে ছাত্রছাত্রীদের থেকে মাসে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে বেতন নেওয়া হলেও শিক্ষকদের বেতন বাবদ ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার দিয়ে থাকে কলেজগুলো। অনেক কলেজ তাও দেয় না।
বেসরকারি কলেজ (অনার্স-মাস্টার্স ) শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা কলেজগুলোতে যোগ দিয়ে বিপদে পড়েছি। আমরা জানতাম না যে, কলেজগুলো নিজেদের অর্থায়নে শিক্ষকদের বেতন দেবে। আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদ ও নবম গ্রেড দেখে আবেদন করেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শর্ত পূরণ করে নিয়োগ পেয়েছি। এরপরও আমরা বেতনবঞ্চিত।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা বারবার বেতনভাতার জন্য দাবি জানিয়েছি। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন শিক্ষকরা কলেজের কাছে বেতন চাইলে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। অনেককে সাময়িক বরখাস্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সদ্য জাতীয়করণকৃত কলেজের অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকরা যদি ক্যাডার /নন ক্যাডার হতে পারে তবে বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকরাও এমপিও পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। কারণ তারা যেভাবে নিয়োগ পেয়েছে আমরাও সেভাবেই নিয়োগ পেয়েছি। কিন্তু শিক্ষার নামে বাণিজ্য করা একটি শ্রেণির অশুভ প্রভাবের কারণে আমরা বেতনভাতা বঞ্চিত হচ্ছি।
১২ মার্চ থেকে অবস্থান কর্মসূচি
এদিকে বেতনবঞ্চিত কলেজ শিক্ষকরা ফের আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ১২ মার্চ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন তারা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়ে বেসরকারি কলেজ (অনার্স-মাস্টার্স ) শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, আমাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আন্দোলন ছাড়া উপায় দেখছি না। তিনি বলেন, গত ৫ (ফেব্রুয়ারি) আমরা একটি জুম মিটিং করেছি। সেখানে ১২ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।