বিদেশ শিক্ষা সাজেশন

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্টেটমেন্ট অব পারপাস’ (এসওপি) লিখবেন যেভাবে

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তির আবেদনের জন্য ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’ (এসওপি), অর্থাৎ অভীষ্ট লক্ষ্যের বিবৃতি লিখতে হয়। স্টেটমেন্ট অব পারপাসকে আগ্রহপত্র বা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যের পরিকল্পনা ও ভাবনা বর্ণনাপত্রও বলা যায়। কেন পড়ব, কী পড়ব, কোন কারণে পড়তে চাই, কী গবেষণা করব, গবেষণার সঙ্গে নিজেকে কীভাবে সম্পৃক্ত করব—এসব বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে লিখতে হয় এসওপিতে। স্টেটমেন্ট অব পারপাসকে লেটার অব ইনটেন্ট বা রিসার্চ স্টেটমেন্টও বলা হয়।

এসওপির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকেরা। গবেষণাধর্মী প্রোগ্রাম যেমন পিএইচডি ও বিভিন্ন মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের জন্য এসওপিতে অতীতের গবেষণা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা লিখতে হয়। পেশা-সংশ্লিষ্ট স্নাতক কোর্সের জন্য এসওপিতে অতীতের কাজের সঙ্গে পড়াশোনার সম্পর্ক ও ভবিষ্যতে কীভাবে পড়াশোনার মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা পেশা খাতে যুক্ত করা যাবে, সেটি উল্লেখ করতে হয়। এককথায়, এসওপিতে আপনি কেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জন্য উপযুক্ত, তা-ই লিখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা কীভাবে আপনার আগ্রহ ও গবেষণার জন্য কাজে আসবে, লিখতে হবে তা-ও।

ভালো SOP কীভাবে লিখবো?

আমি নিচের পয়েন্টগুলো সাধারণত মানার চেষ্টা করি, সেটা SOP হোক, আর গবেষণাপত্র লেখা। এগুলো মেনে চললে লেখার মান কিছুটা হলেও স্বয়ংক্রিয় ভাবে বেড়ে যায়:

  • Top-Down approach
  • তো আমি কী কঁইত্তাম? প্রশ্ন করতে না দেয়া
  • প্রত্যেকটা লাইন, প্রত্যেকটা প্যারাগ্রাফ এর একটা মাত্র উদ্দেশ্য পালন করতে হবে, এক্ষেত্রে আপনার SOP কে শক্তিশালী করা, আপনার পক্ষে যুক্তি দেয়া
  • যার দুঃখ, সেই বুঝে – তাই বুঝানোর – কষ্ট বা চ্যালেঞ্জিং ফ্যাক্টর কী ছিলো আপনার আপনি হওয়াতে
  • গুরুত্বের ভিত্তিতে কনটেন্ট সাজানো

গ্রামার ঠিক রাখা, ফন্ট সবখানে ঠিক মতো মেইনটেইন করা, ২ পৃষ্ঠার মাঝে SOP রাখা – এগুলো সবাই জানে, তাও মনে করিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমরা সাধারণত আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী। আর যখন ১০টা SOP তে খালি আপনারটা এসব ঠিকমতো থাকবে না, তখন ঐ ৯টা এগিয়ে যাবে বলাই বাহুল্য। কিন্তু এগুলো “ভালো” SOP বানায় না।

স্ট্রাকচারঃ একটা SOP এর এনাটমি দেখলে খুব আহামরি কঠিন মনে হবেনা এবং এখানে সবাই মোটামুটি ভালোই মেইন্টেইন করে। প্রথমেই ইন্ট্রোডাকশন তারপর একাডেমিক অ্যাসিভমেন্ট, রিসার্চের এক্সেরিয়েন্স থাকলে সেটা লেখা বা না থাকলে জাস্টিফাই করা, তারপর ঐ পার্টিকুলার ইউনিভার্সিটিতে এবং প্রোগ্রামে কেন ইন্টারেস্টেড সেটা উল্লেখ করা তারপরও আপনি কেন ভালো ক্যান্ডিডেট তথা নিজের গুণকীর্তন করা।

 লেখা শুরু করা:  মনে রাখবেন লেখা শুরু করার জন্য প্রথম প্যারাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই অংশ অ্যাডমিশন কমিটির কাছে উপস্থাপন করবে আপনার বাকি অংশের ধারাবাহিকতা কেমন হবে। লেখার মাঝে একটি ধরণ অনুসরণ করা উচিত। যেমন-

  • ক্ল্যাসিক ধরণ: বেশি ভুমিকা না করে সরাসরি এসওপি লেখার মূল অংশে চলে যাওয়া।  ক্ল্যাসকিাল ধরণ অনেক বেশি নিরাপদ।
  • কোটেশন ধরণ: শুরুতেই কোনো মনীষির বানী দিয়ে আপনি  এসওপি শুরু করতে পারেন। তারপর সেই বানীর রেশ ধরে আপনার এসওপি আগাতে থাকবে।
  • অনুগল্প ধরণ: কোন উদাহরন বা ঘটনার সাপেক্ষে আপনি আপনার আকাঙ্খাটি প্রকাশ করার মাধ্যমে চাইলে এসওপি লেখা যায়। তবে এটি তুলনামূলকভাবে বেশ কঠিন কাজ
  • রূপকথা ধরণ: অবাস্তব কিছুতে আপনি বাস্তবে রূপ দেওয়ার আকাংখা প্রকাশ করছেন। তবে রূপকথা ধরন অনুসরণ না করাই ভালো। কেননা এসওপি যতো প্রফেশনাল হবে আপনার প্রোফাইল ততোই ভারী হবে।
  • সহানুভূতি প্রত্যাশা: এই পদ্ধতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং প্রশংসনীয় নয়। অনেকে নিজের সীমাবদ্ধতাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে অ্যাডমিশন কমিটির কাছ থেকে সহানুভূতি পেতে চান। সীমাবদ্ধতার গল্প বলে সহানুভূতি আদায়ের আশা না করে কিভাবে সীমাবদ্ধতাকে জয় করেছেন সেই গল্পটি বলাই উত্তম।
  •  

    বাড়ির কাজ

    ● এসওপি তৈরি করার আগে একটি পৃষ্ঠায় আপনার যোগ্যতা, আগ্রহ, কাজের অভিজ্ঞতা, গবেষণা, থিসিস পেপার, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের কথা লিখে ফেলুন।

    ● আরেকটি পৃষ্ঠায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী তার ভর্তির যোগ্যতা ও নিয়ম সম্পর্কে একটি কাগজে মূল পয়েন্টগুলো লিখে ফেলুন। যে বিষয়ে গবেষণা করতে চান বা পড়তে চান, তার বিশেষত্ব ও বিশেষ দিকগুলো লিখে ফেলুন।

    ● এবার দুটি পৃষ্ঠার মধ্যে সংযোগ করে একটি চিত্র তৈরির চেষ্টা করুন। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়েছেন, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কীভাবে গবেষণা বা স্নাতকোত্তর করতে যাবেন, তার পথনির্দেশনা আঁকুন। এর মধ্যে আপনার অভিজ্ঞতা ও নিজের জীবনের দিকগুলো টুকরো টুকরো করে যুক্ত করতে হবে।

    ● সবশেষে পুরো গল্পটা সংক্ষিপ্তভাবে দুই পৃষ্ঠার মধ্যে লেখার চেষ্টা করুন। শুধু তথ্য ঢেলে দিলেই হবে না। প্রয়োজনে লেখাটা আপনার শিক্ষক বা সিনিয়রদের পড়তে দিন। তাহলে দুর্বলতাগুলো ধরা পড়বে।

     শেষ কথা

    SOP লেখা নিয়ে বিস্তর গাইডলাইন আছে। গাইডলাইন দেখতে পারেন, কিন্তু কখনোই অন্যের SOP দেখে লেখা শুরু করবেন না। অন্যেরটা না দেখে লেখা শুরু করলে আপনি বাধ্য হবেন নিজের অভিজ্ঞতা, নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে লিখতে। কিন্তু অন্যেরটা দেখলে আপনার সেই নিজস্বতা নষ্ট হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ নিজের অনেক অভিজ্ঞতার কথা মনে থাকবে না, আরেকজন কী লিখেছে সেটা মনে করতে গিয়ে! কাজেই নিজের স্বার্থেই অন্যেরটা না দেখে লিখুন। লেখা শেষ হলে তখন আপনি ধারণা নিতে, আরো ভালো করতে অন্যেরটা দেখতে পারেন।

    আর অনলাইনে অনেক গাইডলাইন আছে, SOP তে কী থাকা উচিৎ, কিভাবে প্ল্যান করা উচিৎ, কী থাকা উচিৎ না ইত্যাদি। আমার পছন্দের কয়েকটা দিয়ে দিলাম, আশা করি কাজে লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *