ধর্ম সর্বশেষ

দেনমোহর পরিশোধ ব্যতিরেক স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কী?

স্ত্রীকে স্পর্শ করার একমাত্র উপায় হলো বিয়ে সম্পন্ন করা। বিয়ে সম্পন্ন করার শর্ত তিনটি। ০১. প্রস্তাব দেওয়া ও কবুল করা; ০২. দেনমোহর দেয়া; ০৩. কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী থাকা। এখানে দেনমোহর নগদ ও বাকি দু’ভাবেই দেয়া যায়। যদি নগদ দেয়া সাব্যস্ত হয়, তা হলে দেনমোহর পরিশোধ ছাড়া স্ত্রীকে পাওয়া যাবে না। আর যদি বাকি থাকে অথবা নগদ অংশও পরিশোধের সময় আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হয়, তা হলে হাতেহাতে দেনমোহর না দিয়েও স্ত্রীর সম্মতিক্রমে তাকে স্পর্শ করা যাবে।সম্মতি মৌখিক, নীরব, সম্মতিসূচক উপস্থিতি ইত্যাদি নানাভাবেই হতে পারে। অবশ্য সম্মানজনকভাবে স্ত্রীকে কিংবা তার প্রতিনিধিকে বিষয়টি অবহিত করে, সময় ও অবকাশ নিয়ে সাক্ষাত করাই বাঞ্ছনীয়।

তবে সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বাকি দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে স্ত্রী বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।

হাদীসে এসেছে যদি কোনও ব্যক্তি কারো কাছ থেকে কোনও পণ্য কিনে এবং তার মূল্য পরিশোধের ইচ্ছা না রাখে অথবা কারও ওপর কিছু ঋণ আছে কিন্তু সে তা আদায়ের ইচ্ছা না রাখে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুর সময় ও কেয়ামতের দিন প্রতারক ও চোর হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তাই কোনও ব্যক্তি স্ত্রীর দেনমোহর ঠিকমতো আদায়ের ইচ্ছা না রাখলে তার ওপর দুই অপরাধের দায় এসে পড়বে। প্রথমটি হলো- ব্যভিচার, দ্বিতীয় হলো, প্রতারণা বা চুরি। (ইসলাহে ইনকিলাব, খন্ড,২, পৃষ্ঠা, ১২৭)

স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।

وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সূরা নিসা-৪)

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]

অন্তত তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না। যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সূরা নিসা-২৪)

তাই প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের উচিত এমন মারাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকা আর এজন্য মোহর আদায়ের পুরো ইচ্ছা থাকতে হবে।

অভিজ্ঞ আলেমরা বলেন,  মানুষের সাধ্যের মধ্যে কোনও বিষয় থাকলেই মানুষ তা আদায়ের পুরোপুরি ইচ্ছা করে এবং তা আদায় করতে পারে। তাই সবার উচিত বিয়ের সময় মানুষকে দেখানোর জন্য বড় অংকের মোহর নির্ধারণ না করে নিজের সাধ্যমতো মোহর নির্ধারণ করা। এতে মোহর আদায় করা সহজ হবে এবং বড়ধরনের পাপ থেকে বেঁচে থাকা যাবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, খন্ড,২, পৃষ্ঠা, ১২, বর=কনে, ১৫১)

এছাড়া ইসলামী শরীয়তে সাধ্যের অতিরিক্ত কোনও বিষয় মাথায় চাপাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোনও মুমিনের জন্য উচিত নয় নিজেকে অপদস্থ করা। সাহাবায়েকেরাম জিগেস করলেন, মানুষ নিজেকে অপদস্থ করে কীভাবে? তিনি বললেন, সাধ্যাতীত বিপদ নিজের ওপর চাপিয়ে নেয়া’।

এই হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায়, সাধ্যের অতিরিক্ত মোহর নির্ধারণ না করা এবং তা কম হওয়া কাম্য।(ইসলাহে ইনকিলাব, খন্ড,২, পৃষ্ঠা, ১৩০)

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *