স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়

দেড়শ ফাঁকা আসন রেখেই ক্লাস শুরু জবিতে

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তিতে অংশ নেয়। কিন্তু সার্বিক প্রক্রিয়া সহজতর করতে গিয়ে এবারও গ্যাড়াকলে পড়েছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যার ব্যতিক্রম নয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। বারবার মেধাতালিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন কোনোভাবেই পরিপূর্ণ হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির। প্রায় দেড়শ আসন ফাঁকা রেখেই বাধ্য হয়ে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ভর্তি কার্যক্রমে অধিক কালক্ষেপণের ফলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে দেরিতে। ফলে তারা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সেশনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সময়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে। আর ফাঁকা আসন পূরণে ন্যূনতম পাস নম্বর পেয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে সার্বিকভাবে গুচ্ছের গ্যাড়াকলে জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব জৌলুস হারিয়েছে বলে দাবি করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এই পরিস্থিতির জন্য গুচ্ছের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সমন্বয়হীনতা, সময়ক্ষেপণ, অধিকতর সুযোগ প্রদানের প্রভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আসনগুলো সহসায় পরিপূর্ণ না হওয়ার কারণ বলে মনে করেন অনেকে। তাই গুচ্ছ বাদ দিয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরা এবং পুনরায় সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট চালু কিংবা বিজ্ঞান ইউনিটের শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক অনুষদে বরাদ্দ বিভাগগুলোতে আসন কমানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ইতোমধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জানিয়েছে৷ অন্যদিকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদ থেকে উপাচার্যের কাছে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতির পক্ষে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে৷ বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে থাকবে নাকি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরবে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় গত বছরের ৩০ জুলাই ‘এ’ (বিজ্ঞান) ইউনিটের, ১৩ আগস্ট ‘বি’ (মানবিক) ইউনিটের এবং ২০ আগস্ট ‘সি’ (বাণিজ্য) ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে ৪ আগস্ট এ ইউনিট, ১৬ আগস্ট বি ইউনিট এবং ২৩ আগস্ট সি ইউনিটের ফল প্রকাশ করা হয়।

ফল প্রকাশিত হওয়ার পর ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের ভর্তিসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করে শিক্ষার্থীরা। এই তিন ইউনিটে সর্বমোট ৪৩ হাজার ৫৫১ জন ভর্তিচ্ছু আবেদন করেন।

আবেদন শেষে গত ৪ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মেধাতালিকায় প্রকাশ করা হয়। যেখানে ‘এ’ ইউনিটে এক হাজার ১৫৫ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৮৫০ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৬১০ জন শিক্ষার্থীকে বিষয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরপর ধাপে ধাপে আরও আটটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভাইভায় ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতেও আসন পরিপূর্ণ না হওয়ায় সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি তাৎক্ষণিক ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনো প্রায় দেড়শ আসন ফাঁকা আছে।

এদিকে গুচ্ছভুক্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাতালিকা প্রকাশ এবং প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রমই চলতে থাকে প্রায় তিন মাস ধরে৷ আর পরীক্ষা সম্পন্ন ও ফল প্রকাশ হয় এরও তিন মাস আগে৷ অর্থাৎ ছয় মাস সময় পার হয় ভর্তি সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রেই।

যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেশনের (২০২১-২২) শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ শেষের দিকে। অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো ভর্তি কার্যক্রমই শেষ হয়নি৷ কবে নাগাদ শেষ হবে তারও নিশ্চিয়তা নেই।

অপরদিকে দেশের শীর্ষ চার বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না আসায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়েও শুরু থেকেই প্রশ্ন থাকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। আবার ন্যুনতম পাস নাম্বার পেয়েই শিক্ষার্থীদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বিগত বছরগুলোর সব অর্জনকে ম্লান করেছে বলে দাবি শিক্ষকদের।

জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সার্বিক ভোগান্তি হ্রাস ও সুবিধার্থে আয়োজনের কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে তার চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই প্রেক্ষাপটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সব মহল থেকে পূর্বের ন্যায় নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জানানো হলেও সেটিতে সাড়া দেয়নি প্রশাসন। দ্বিতীয় বার গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এখনো ধুঁকছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, অতি অল্পসময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতোটা এগিয়ে গিয়েছিল, দুইবার গুচ্ছে যাওয়ায় অনেকটা আবার পিছিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসংগতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বারবার গণ সাক্ষাৎকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। যারা নাম্বার পেয়েছে তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাই এবছর থেকে আবারও নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি তাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *