সম্পাদকীয় সর্বশেষ

তরুণদের মাঝে কৃষির উন্মাদনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন রাফাতুল রিশাদ

সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। গার্মেন্টস শিল্প ও বৈদিশিক কর্মসংস্থানের মতো বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় আরেকটি খাত হচ্ছে কৃষি। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, কৃষি মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে। দেশের জিডিপিতে কৃষি ও শস্য খাতের যৌথ অবদান ১৬.৮৭ শতাংশ( সূত্র : কৃষি মন্ত্রনালয় ওয়েবসাইট )। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এত বিশাল অবদানের পরও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কৃষি খাতে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে যে হারে উন্নতির প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে এর প্রধান কারণ কৃষি খাতে শিক্ষিত তরুনদের অনাগ্রহ।

একটা সময় পর্যন্ত দেশে এই ধারণা প্রচলিত ছিল শিক্ষিত তরুনরা কেবলই জজ-ব্যারিষ্টার-অফিসার হবে। ক্ষেতে খামারে কাজ তো অশিক্ষিত-গেঁয়ো লোকদের কাজ। সমাজের এই ভ্রান্ত ধারনা বদলে দিয়ে দেশের কৃষিতে শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ যোগানের মাধ্যমে কৃষির বিপ্লব ঘটাতে যে কজন কাজ করছে তাদেরই একজন তরুণ গবেষক ও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক জনাব রাফাতুল রিশাদ

কৃষি শিক্ষাকে কীভাবে আরো তরুনদের কাছে মজার ও আকর্ষনীয় করে তোলা যায় তা নিশ্চিত করতে শিক্ষক রিশাদের গৃহীত পন্থা দারুণ প্রশংসনীয় ও উল্লেখযোগ্য। নিজ হাতে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে, ট্রাক্টর চালিয়ে, চাষাবাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখাচ্ছেন তিনি। তার ব্যবহারিক ক্লাস গুলোতে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা হাসি-মজা,উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে তার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় শিখছে,তাদের চোখ মুখে থাকেনা কোন ক্লান্তি অনাগ্রহের ছাপ।

জনাব রাফাতুল রিশাদের বিষয়ে তার ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, স্যার শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই নন তিনি আমাদের মেন্টর এবং বন্ধু। বিভিন্ন জটিল বিষয় তিনি এতো সহজ ও সুন্দর ভাবে বোঝান যে মেক্যানিক্যালের মতো জটিল ও বোরিং বিষয়গুলোও আমাদের কাছে পানির মতো সহজ হয়ে যায়। ব্যবহারিক ক্লাসের ২.৩০ ঘন্টা যে কখন চোখের পলকে শেষ হয়ে যায় আমরা তার টেরও পাই না। আনন্দের মাধ্যমেও যে শেখা যায় তা আমরা রিশাদ স্যারের ক্লাস করেই বুঝেছি।

“কৃষিই গর্ব, কৃষিই শক্তি, কৃষিই ভবিষ্যৎ ”   —– রাফাতুল রিশাদ

শিক্ষকতার পাশাপাশি একাডেমিক বিষয়েও তার সাফল্য নজর কাড়ার মতো, ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কলেজ থেকে কৃত্বিতের সহিত এইচএসসি পাস করার পর তিনি ভর্তি হোন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে পড়াশোনা শেষ করে কৃষি বিষয়ে আরো অধিক জ্ঞানার্জনের তিনি পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে লিমকোকুইং ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। চাইলে তিনি সেখানই থেকে যেতে পারতেন বা যেতে পারতেন অন্য কোন দেশে। কিন্তু দেশের মাটির প্রতি তার মোহকে তিনি ত্যাগ করতে পারেন নি। দেশের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক ও টেকসই উন্নয়ন ঘটিয়ে বর্হিবিশ্বের সাথে যেন পাল্লা দিতে পারে সেই লক্ষ্যে তিনি দেশে ফিরে কাজ শুরু করেন।

দেশে ফিরেই তিনি যোগ দেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কৃষি বিজ্ঞান বিভাগে অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে। তার অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সেখানেই তিনি তৈরী করছেন তার মতো একদল তরুণকে যাদের হাত ধরেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থার বিপ্লব ঘটবে। দেশের সন্তানেরা আবারও তাদের রচনায় লিখতে পারবে ‘গোলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু,পুকুর ভরা মাছ’ সেই উক্তি। শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি জড়িত রয়েছেন গবেষনা কার্যক্রমে, ফুড ট্যুরিজম বিষয়ে করছেন আন্তর্জাতিক মানের গবেষনা। কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন একাডেমিক সেমিনারে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। তার পরিশ্রম, প্রচেষ্টা, আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী পাঠদানের মাধ্যমে তিনি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির কৃষি বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায় । ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে তার কাজ করা বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক প্রজেক্ট বিভিন্ন মহলে ইতোমধ্যে হয়েছে প্রশংসিত ও সমাদৃত।

ব্যক্তিজীবনেও তার রয়েছে পশু-পাখির প্রতি দারুণ মমতা। আগাগোড়া সম্পূর্ণ কৃষি মনষ্ক এই মানুষ আমাদের সমাজের তরুণদের জন্য বড় এক উদাহরণ। আমাদের আশা তার কাছে থেকেই অনুপ্রেরনা নিয়ে দেশের মেধাবীর শক্ত হাতে ধরবে এই দেশের কৃষির লাঙল। যার প্রতিটি খোঁচায় মাটি থেকে বেরিয়ে আসবে সোনা। সমৃদ্ধ হবে দেশ ও জাতি। একাডেমিক ডায়েরির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাই জনাব রিশাদের মতো শিক্ষকদের, যারা এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছে নিরলস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *