বিদেশ শিক্ষা সর্বশেষ

উচ্চশিক্ষায় বেছে নিন সুইজারল্যান্ড, থাকতে হবে যেসব যোগ্যতা

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ সুইজারল্যান্ড। ব্যাংকিং, শিক্ষাব্যবস্থা এবং উন্নত জীবনযাত্রার মানের জন্য বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড অন্যতম। সুইজারল্যান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে বিজ্ঞান-গবেষণা ও আপেক্ষিকতার জনক আইনস্টাইনের নাম। মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সুইস সরকার বরাবরই জোর দিয়ে আসছে শিক্ষার ওপর।

সরকারি তহবিলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও দিয়ে থাকে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের সুযোগ। প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে স্কলারশিপগুলোর ধরন হয় বিভিন্ন রকম এর ফলে প্রতিবছর প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পাড়ি জমাচ্ছে সুইজারল্যান্ডে।

সুইজারল্যান্ডের ডিগ্রিসমূহ
সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক ডিগ্রী (৩/৪ বছর মেয়াদী), স্নাতকোত্তর ডিগ্রী (১.৫-২ বছর মেয়াদী) এবং পিএইচডি ডিগ্রী  (৩-৫ বছর মেয়াদী) করানো হয়। আপনি যদি স্নাতক ডিগ্রির জন্য কোন সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হতে হবে। আর ভাষাগত দক্ষতা-আপনাকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভাষায় পড়ানো হয়, সে ভাষায় দক্ষ হতে হবে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রীতে আবেদন করার জন্য আপনার কমপক্ষে ১৬ বছরের শিক্ষা জীবন (Schooling) থাকতে হবে। ভাষাবিষয়ক দক্ষতা থাকতে হবে। এজন্য IELTS-এ আপনাকে 6.5 থেকে 7.00 পেতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে বেশ কিছু সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ে GRE/ GMAT চাইতে পারে। সুইজারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় ইংরেজী, ফরাসি, জার্মানি এবং ইতালীয় ভাষায়। তাই, আপনি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে জার্মান কিংবা ইতালীয় ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে আবেদন করতে পারেন।

ভর্তির সময়  
সুইজারল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারনত বছরে দুইবার আবেদন করা যায়। (১) সামার সেশন (Summer Session) (২) উইন্টার সেশন (Winter Session)। সাধারণত ৬-৮ মাস আগেই ভর্তির আবেদন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সুইজারল্যান্ডের সরকারি স্কলারশিপ হচ্ছে গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ। প্রতিবছর যেকোনো বিষয়ে বহিরাগত স্নাতকোত্তর গবেষকদের এই স্কলারশিপটি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাসিক জীবনযাত্রা, পড়াশোনার সম্পূর্ণ খরচ, স্বাস্থ্য বীমা, ভ্রমণ খরচ/বিমান ভাড়া এবং আবাসন খরচ অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডক্টরেট বা পোস্ট-ডক্টরাল স্তরে গবেষণার জন্য সুইজারল্যান্ডগামী হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্কলারশিপের মধ্যে ইটিএইচ জুরিখ এক্সিলেন্স মাস্টার্স স্কলারশিপ, মাস্টার্স ডিগ্রীধারীদের জন্য ইপিএফএল এক্সিলেন্স ফেলোশিপ, গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট জেনেভা স্কলারশিপ, পিএইচডির জন্য জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকার জেনেভা একাডেমি স্কলারশিপ অন্যতম।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত অনুদান দিয়ে থাকে, মার্কিন ডলারে যার মূল্যমান দাঁড়ায় ৬৫ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে পড়াশোনার খরচ ছাড়াও আবাসনসহ জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচও মিটে যায়

সুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতাসমূহ  
(১) গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপটি শুধুমাত্র স্নাতকোত্তর বা পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়, তাই আবেদনকারীদের কমপক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হয়।

(২) আবেদনকারীদের অবশ্যই সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্র পেতে হয়। মূলত এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হয় যে, তিনি শিক্ষার্থীর গবেষণার তত্ত্বাবধান করতে ইচ্ছুক। আবেদনকারীদের নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ একটি গবেষণা প্রস্তাবণা থাকতে হয়। এর ওপর নির্ভর করেই প্রফেসর শিক্ষার্থীর গবেষণার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। এখানে একাডেমিক রেজাল্টও গুরুত্ব দেয়া হয়।

(৩) উন্নত শিক্ষাব্যবস্থার দেশটিতে এরকম আকর্ষণীয় স্কলারশিপ মূলত বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে। তাই যথাযথ মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমেই আবেদনকারীদের স্কলারশিপের জন্য নির্বাচন করা হয়। স্বভাবতই খুব ভালো সিজিপি এক্ষেত্রে সবার আগে গুরুত্ব পায়।

(৪) গবেষণাটি চলবে ইংরেজিতে, বিধায় শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর মিডিয়াম অব ইন্স্ট্রাকশন দেখা হয়। পাশাপাশি তার ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ স্বরূপ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সনদ প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস-এ কমপক্ষে ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর দরকার হয়।

(৫) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্কলারশিপের ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীর অনুরূপ যোগ্যতা চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, যেহেতু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষার্থীদের থেকে আবেদন নেওয়া হয়, সেহেতু স্নাতকোত্তর সনদপত্রটি সুইস বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালোভাবে যাচাই করে তবেই শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অধ্যয়ন সম্পর্কিত পরবর্তী কার্যক্রমে যেতে অনুমতি দেয়।

স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ ঘোষণার সময় এফসিএস (ফেডারেশন কমিশন ফর স্কলারশিপ)-এর ওয়েবসাইট-এ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলোর একটি প্যাকেজ দেওয়া থাকে। এই প্যাকেজ অনুসারে নিম্নলিখিত নথিগুলো প্রস্তুত করতে হবে।

স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র
গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ ঘোষণার সময় এফসিএস (ফেডারেশন কমিশন ফর স্কলারশিপ)-এর ওয়েবসাইট-এ আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলোর একটি প্যাকেজ দেওয়া থাকে। এই প্যাকেজ অনুসারে নিম্নলিখিত নথিগুলো প্রস্তুত করতে হবে।

১। শিক্ষার্থীর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরসহ কম্পিউটারে টাইপ ও প্রিন্ট করা এফসিএস আবেদনপত্র

২। একাডেমিক প্রকাশনা ও অর্জনের তালিকা সহ একটি সম্পূর্ণ সিভি

৩। সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠার একটি মোটিভেশন লেটার

৪। শিক্ষার্থীর স্ব-হস্তে স্বাক্ষরসহ সর্বোচ্চ পাঁচ পৃষ্ঠার একটি পরিপূর্ণ গবেষণা প্রস্তাবণা

৫। সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্রের অনুলিপি, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে কেন তিনি শিক্ষার্থীর গবেষণা তত্ত্বাবধান করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে চিঠির সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত সিভি সংযোজন করতে হবে।

৬। এফসিএস রেকমেন্ডেশন ফরম ব্যবহার করে দুজন ভিন্ন অধ্যাপকের নিকট থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার

৭। সকল শিক্ষাগত সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্টের প্রত্যায়ন করা ইংরেজি ভাষায় অনুদিত ফটোকপি

৮। এফসিএস ফরম অনুযায়ী স্বাস্থ্য সনদপত্র

৯। শিক্ষার্থীর পাসপোর্ট-এর ফটোকপি সাইজ ছবি

বেসরকারি স্কলারশিপগুলোর ক্ষেত্রেও এধরণের নথি কম-বেশি প্রয়োজন হয়। তবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের ধারা ভিন্ন। তাই সেগুলোর স্ব স্ব ওয়েবসাইট থেকে খুটিনাটি ভালোভাবে জেনে নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া প্রতিটি সুইস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই খুব সহজেই অনলাইন আবেদন করা যায়।

সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের জন্য মূলত তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের যাচাই করা হয়। সেগুলো হলো- প্রার্থীর প্রোফাইল, গবেষণা প্রকল্প বা শৈল্পিক কাজের গুণমান এবং গবেষণাটির ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। তাই আবেদনের মুহূর্তে সিভি ও গবেষণা প্রস্তাবণায় এই বিষয়গুলোকে সুস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলা আবশ্যক।

পার্ট টাইম জব 
সুইজারল্যান্ডে পড়াশুনার পাশাপাশি আপনি সপ্তাহে ১৫ ঘন্টা কাজ করা করার সু্যোগ পাবেন। আবার শর্ত সাপেক্ষে অনেক সময় ফুল টাইম কাজ করারও অনুমতি পেতে পারেন। তবে প্রথম ৬ মাস আপনি কোন কাজই করতে পারবেন না। ৬ মাসের পরে আবেদন করে অনুমতি নিয়ে আপনি পার্ট টাইম কাজ করার সুযোগ পাবেন।

চাকুরি এবং স্থায়ী বসবাসের (পিআর) সুযোগ
সুইজারল্যান্ডে পড়াশুনা শেষ করে আপনি ৬ মাসের জব সার্চ ভিসা পাবেন। আর নাগরিকত্ব পেতে সুইজারল্যান্ডে আপনাকে বসবাস করতে হবে ১২ বছর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *