কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত (এআই) চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’ আসার পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নতুন নতুন যেসব উদ্যোগ চালু হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, এআই ব্যবহারকারীরা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। চ্যাটজিপিটি বা গুগল বার্ড থেকে সঠিকভাবে উত্তর পেতে যে ধরনের নির্দেশনা বা প্রম্পট ব্যবহৃত হচ্ছে, তা রপ্ত করতে মানুষ এখন পড়াশোনা শুরু করেছেন। কারণ, একটি সঠিক প্রম্পটই শুধু সঠিক ও তথ্যবহুল উত্তর নিয়ে আসতে পারে।
সঠিক প্রম্পট তৈরি করার বিষয়ে ইতিমধ্যে কোর্সও চালু হয়েছে। সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ের সঙ্গে ডিপ লার্নিং ডট এআই নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এমন একটি কোর্স চালু করেছে। কোর্সের শিরোনাম ‘চ্যাটজিপিটি প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং ফর ডেভেলপারস’। কোর্সটির মূল উদ্দেশ্য ডেভেলপারদের সঠিক প্রম্পট তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
শুধু চ্যাটজিপিটি নয়, অন্যান্য এআই-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রেও এসেছে প্রম্পট তৈরির বিভিন্ন ট্রেনিং ও কলাকৌশল। প্রম্পট তৈরি ছাড়াও অনেক সময় এআই অ্যাপ্লিকেশনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করে প্রম্পট ইঞ্জিনিয়াররা।
যেহেতু সঠিক প্রম্পট অনেক কাজ সহজে করে, তাই নতুন এ কাজটি ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইউরোপ-আমেরিকায় অনেক প্রতিষ্ঠান প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার পদে জনবল নিয়োগ শুরু করেছে। এ পদে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত বার্ষিক বেতন দেওয়ার কথা বলছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
এই বেতনে জনবল খুঁজছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান ‘এনথ্রোপিক’। টেকজায়ান্ট গুগল এ প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম বিনিয়োগকারী। তারা সানফ্রানসিসকো অফিসের জন্য প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার ও লাইব্রেরিয়ান পদে লোক খুঁজছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ক্লারিটি, বোস্টনের একটি হাসপাতাল ও লন্ডনের একটি ল’ফার্ম প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে আইটি কর্মী সরবরাহের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ একটি এজেন্সির কর্মকর্তা মার্ক স্ট্যান্ডেন বলেন, ‘গত ২৫ বছরে আমার দেখা আইটি ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে এটা সম্ভবত সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল পেশা। বেতন ৪০ হাজার পাউন্ড থেকে শুরু। কিন্তু আমরা দুই থেকে তিন লাখ পাউন্ড বেতন প্রত্যাশী প্রার্থীও পাচ্ছি। চাহিদা বেশি থাকার কারণে প্রার্থীরা যেকোনো অঙ্কের বেতন চাইতে পারেন।’
প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার পদে কোনো প্রতিষ্ঠানই কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রিধারী বা দক্ষ সফটওয়্যার ডেভেলপার হওয়াকে আবশ্যক ভাবছে না। তারা শুধু চাচ্ছে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা। এর সঙ্গে সঠিক প্রম্পট তৈরির দক্ষতা। ফলে নতুন এ পেশার চাহিদা প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মক্ষেত্রের বাইরেও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিরাজ করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর্থিক, বিমা ও আইনি ক্ষেত্রগুলো।
এ ছাড়া নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি না করেও প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে উপার্জন করার সুযোগ নিয়ে এসেছে ‘প্রম্পট বেইজ’ নামে একটি মার্কেটপ্লেস। প্রতিষ্ঠানটি অন্য প্রতিষ্ঠানকে ফ্রিল্যান্স প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার খুঁজে দিতে এবং ব্যক্তিপর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রম্পট কেনা ও বেচায় সহায়তা করে।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার।