সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সর্বশেষ

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে ভর্তি শেষ হচ্ছে না ১০ মাসেও

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ভোগান্তি ও খরচ কমাতে দীর্ঘদিনের দাবির পর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নিতে সম্মত হয় ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কিন্তু প্রথমবারই নানা ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে আস্থা ধরে রাখতে পারেনি এই পদ্ধতি। এ নিয়ে ভর্তিচ্ছুদের আন্দোলনেও নামতে হয়েছে। সেসময় সংশ্লিষ্টরা আশ্বাস দিয়েছিলেন দ্বিতীয়বারে এসকল ভোগান্তি লাঘব হবে।

তবে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে এসে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এই শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হলেও এখনও ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) গুচ্ছভুক্ত দেশের ২২ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর আগেই ৫ থেকে ৬ মাস পিছিয়ে পড়ছে।

তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১ এপ্রিল গুচ্ছভুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে ৩০ জুলাই, ১৩ আগস্ট ও ২০ আগস্ট যথাক্রমে এ, বি ও সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ফল প্রকাশ, মেধা তালিকা, ভর্তি আবেদন, ভর্তি হওয়া প্রভৃতি কার্যক্রম শেষ করতে করতে পার হয়েছে প্রায় ১০ মাস। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সাতবার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন পূর্ণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বর্তমানে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম মেধা তালিকার ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ভর্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন সম্পূণ্ ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় প্রয়োজন হবে।

এর আগে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মতো ভর্তি নিয়েছিল। ফলে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় আসায় পদ্ধতিগত জটিলতা তৈরি হয়েছিল। চলতি শিক্ষাবর্ষে এই জটিলতা দূর করতে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও দশ মাসেও ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। অথচ গুচ্ছের বাইরে থাকা স্বায়ত্বশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ই এই সময়ের মধ্যে তাদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ করেছে।

আবার অন্যদিকে একই সময়ে পাস করে যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে তাদেরও পঠনক্রমের এক বছর পার হয়ে গেছে। এদিকে থেকে এগিয়ে আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও। তারা দুই বছর আগেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি শেষ হওয়ার পর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করলেও গত দুই বছরে এ ব্যবস্থা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ বছরে সবার আগে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে ৩ জুলাই ক্লাস শুরু করে, যেখানে গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাই শেষ হয়েছিল সেপ্টেম্বরে।

গুচ্ছভুক্ত ভর্তি কার্যক্রমের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছের বাইরে আছে তারা নিজেরা এককভাবে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে আগে থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে দেয় এবং স্বল্প সময়ে শেষ করে ফেলে। কিন্তু গুচ্ছভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আমরা চাইলেই আলাদাভাবে  নিজেদের মত করে উদ্যোগ নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে পারি না।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৩৫২টি। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৩৪১ টি, ‘বি’ ইউনিটে ৪ টি এবং ‘সি’ ইউনিটে ৭ টি আসন  ফাঁকা রয়েছে।  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৩৭৮ টি। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ২৮৮টি, ‘বি’ ইউনিটে ৪ টি এবং ‘সি’ ইউনিটে ২ টি আসন  ফাঁকা রয়েছে।  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ফাঁকা রয়েছে ৫২৯ টি, যার মধ্যে ‘এ ইউনিটে ৩৬১টি, ‘বি ইউনিটে ১১৪টি, এবং ‘সি ইউনিটে ৫৪ টি আসন ফাঁকা রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮ টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২০০ টি এবং বশেমুরবিপ্রবিতে প্রায় ১৮৯ টি আসন  ফাঁকা রয়েছে।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমানে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ, যার ফলে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাওহীদ হাসান নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতি বর্তমানে আমাদের জন্য একধরনের ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। মেডিকেল এবং ইঞ্জনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, এমনকি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও  আমার বন্ধুরা যখন ক্লাস শুরু করে দিয়েছে আমি তখনও এটাও নিশ্চিত নই যে শেষ পর্যন্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত ভর্তি হব।

এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো: রাশেদ তালুকদার বলেন, ‘প্রতিটি পদ্ধতিরই কিছু সুবিধা-অসুবিধা থাকে। এখানে একইসাথে ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম চলছে তাই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় প্রয়োজন হচ্ছে। তবে গুচ্ছ পদ্ধতির মূল যে লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটির ভোগান্তি নিরসন সেটি কিন্তু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তার পছন্দ অনুযায়ী যেকোন একটিতে ভর্তি হতে পারছে।’

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি কার্যক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে এই সিস্টেমকে আরও সময়োপযোগী করে তোলার সুযোগ রয়েছে। আর আমরা যদি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সেশনজটের বিষয় নিয়ে কথা বলি তাহলে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া নয় বরং এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার সময় নিয়েও সংশ্লিষ্টদের ভাবা উচিত। এই দুটি পরীক্ষাই ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারলে শিক্ষার্থীরা প্রায় এক বছরের সেশনজট থেকে রক্ষা পাবে

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আমরা গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থেই ধাপে ধাপে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করছি। কারণ দেখা যাচ্ছে আমরা যদি একবারে তালিকা দিয়ে ভর্তির সময় বেঁধে দেই তাহলে অনেক শিক্ষার্থীই কিন্তু ভর্তি থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে অনেক বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে কিন্তু আসন ফাঁকা থেকে যাবে।  তবে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে থেকে ক্লাস শুরু করে দিয়েছে তারা তাদের একক সিদ্ধান্তে এটা করেছে। কিন্তু আমাদের যেহুতু ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এই গুচ্ছ। সকলের একসাথে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে এই সময় টা তো আমাদের লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *