দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয়। সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় অনেকে শেষ পর্যায়ে এসে জানতে পারেন যে, তাদের কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এ ছাড়া হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে বছরে আরও ২০ হাজার রোগী মারা যান। অনেকে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দেন। কিডনি রোগীদের ৭৫ শতাংশ বিভিন্ন সময়ে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনজনিত চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ আয়োজিত দুই দিনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের প্রথম দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মিরপুরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে ১৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ও ক্যাডাভেরিক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কিডনি রোগ ও ও কিডনি অকেজো রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীদের সচেতন করতে হবে, তাদের স্ক্রিনিং করার জন্য। যথাসময়ে কিডনি রোগ শনাক্তের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করা জরুরি। কিডনি অকেজো হয়ে গেলে রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালসিস অথবা কিডনি সংযোজন করতে হয়। মরণোত্তর অঙ্গদান বা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ে লোকজনকে আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মৃত ব্যক্তির কিডনি দান করা হলে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউয়ের উপ-উপাচার্য এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, কিডনি জটিলতা এড়াতে যথাসময়ে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করতে হবে। আর এটি ঠিকমতো না হওয়ায় কিডনি সমস্যাও যথাসময়ে শনাক্ত না হয়ে কিডনি রোগী বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের চিকিৎসক মুহাম্মদ মাগদি ইয়াকুব বলেন, একে অপরের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। চিকিৎসাসেবায় শুধু চিকিৎসকেরাই যুক্ত থাকেন না, নার্স প্যারামেডিক থেকে শুরু করে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরও ভূমিকা রয়েছে।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক হারুন আর রশিদ বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। আর্থিক সংকটে বেশির ভাগ কিডনি রোগী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডায়ালাইসিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানের বিষয়ে অনেক মানুষের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। সেসব দূর করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মৃত্যুর পর অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশন স্বল্প মূল্যে ১৬ বছর ধরে কিডনি রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে।
কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাসচিব রুহুল আমিন রুবেল বলেন, দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। সময়মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় অনেকে একদম শেষ পর্যায়ে এসে জানতে পারেন। এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক