নিউমোনিয়া একটি সংক্রামক ব্যাধি। ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে, এমন নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস দ্বারা এটি হতে পারে। রোগটি বায়ুবাহিত বলে হাঁচি–কাশির মাধ্যমে ছড়ায়।
নিউমোনিয়া সব বয়সী শিশুর মধ্যে দেখা গেলেও নবজাতক ও পাঁচ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে এর ঝুঁকি বেশি। ‘জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ’–এর মতে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। শুধু শিশু নয়, বিশ্বব্যাপীও নিউমোনিয়া সব বয়সে মানুষের জন্য জীবাণুঘটিত মৃত্যুর একক কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
লক্ষণ
মাঝারি বা তীব্র মাত্রার জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট হলে প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়, বুকের খাঁচা দেবে যায় এমনকি নীল বর্ণ ধারণ করতে পারে শিশু। এ ছাড়া শিশুরা সাধারণত খেতে চায় না।
চিকিৎসা
নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। নিউমোনিয়ার মাত্রা বুঝে বাড়িতে বা হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
নিউমোনিয়ায় সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় সিরাপ ও বেশি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে শিশু ৫ থেকে ৭ দিনে ভালো হয়ে যায়।
যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করেনি, একই ঘরে অনেক লোকের সংস্পর্শে থাকে, ঘরের পরিবেশ খোলামেলা ও আলো–হাওয়া যুক্ত নয় এবং সঙ্গে অন্য কোনো অসুখ (যেমন হাম, অপুষ্টি) থাকে, তারা নিউমোনিয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এমন আক্রান্তদের সেরে উঠতেও বেশি সময় লাগতে পারে।
সুরক্ষা, প্রতিরোধ ও প্রতিকার
চারটি ধাপে আমরা শিশুকে নিউমোনিয়ার ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারি।
১. পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে এবং ছয় মাস পর থেকে পাশাপাশি সুষম পুষ্টিগুণসম্পন্ন বাড়তি খাবার দিলে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠবে, যা নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা দেবে।
২. নিউমোনিয়া প্রতিরোধের টিকা দিতে হবে।
৩. সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, ঘরবাড়ি ধুলা ও দূষণমুক্ত রাখা ইত্যাদি নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
৪. নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো ও বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে, যেন দ্রুত নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে বিপদমুক্ত করা যায়।
নিউমোনিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সচেতনতাই পারবে এর মৃত্যুঝুঁকি কমাতে পারে।
সূত্র : প্রথম আলো