এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া আজ বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে এবং নিজের সুনাম কুড়িয়েছে বিশ্বের দরবারে। মালয়েশিয়ার সামাজিক,অর্থনৈতিক কাঠামো দৃঢ় এবং উন্নত। তবে এই দেশ সবার কাছে পরিচিত এর উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য। ফলে বর্তমানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমাচ্ছে মালেয়েশিয়ায়।
আজকের এই উন্নত মালয়েশিয়া গড়ে তুলেছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির বিন মোহাম্মদ । মালয়েশিয়া দক্ষিন এশিয়ার গর্ব । এর রাজধানীর নাম কুয়ালালামপুর। এদেশের অফিশিয়াল ভাষা মালায় ও মুদ্রা রিঙ্গিত।
শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
মালয়েশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা চার স্তরে বিভক্ত,
(১) ডিপ্লোমা কোর্স: ২ থেকে ৩ বৎসর মেয়াদী।
(২) স্নাতক কোর্স: ৩ থেকে ৫ বৎসর মেয়াদী।
(৩) স্নাতকোত্তর ডিগ্রী: ১.৫ থেকে ২ বৎসর মেয়াদী।
(৪) ডক্টরাল (PhD) ডিগ্রী: ৩-৫ বৎসর মেয়াদী।
ভাষাগত যোগ্যতাঃ
মালয়েশিয়ায় IELTS ছাড়া পড়তে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে IELTS স্কোরের চাহিদা বাড়ছে। সাধারনত ৬.০-৬.৫ IELTS স্কোর হলেই মালেয়েশিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায়।
মালয়েশিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে অসংখ্য বিষয়ে পাঠদান করা হয় যেমন, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন (এম বি বি এস), বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, মর্ডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কমিউনিকেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, হেলথ সায়েন্সেস, চার্টার্ড একাউন্টেন্সি, এগ্রিকালচার, ফরেস্ট্রি, ইসলামিক ষ্টাডিজ, এনভায়রোনমেন্টাল সায়েন্স, ডিজাইন এন্ড আর্কিটেকচার ইত্যাদি। পছন্দের কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে ভিজিট করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলো।
মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নের যোগ্যতাসমূহঃ
(১) ডিপ্লোমা কোর্স: এই কোর্সের জন্য নূনতম উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।
(২) স্নাতক কোর্স: উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পাশ হতে হবে।
(৩) স্নাতকোত্তর ডিগ্রী: ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী হতে হবে।
(৪) ডক্টরাল (PhD) ডিগ্রী: ডক্টরাল (PhD) কোর্সের জন্য পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী এবং ব্যাপক গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা দরকার হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা, প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
সেমিস্টারঃ
মালয়েশিয়ায় প্রতি বছরে তিনটি সেমিস্টার পড়ানো হয়।
• প্রথম সেমিস্টারটি জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
• দ্বিতীয় সেমিস্টার মে থেকে আগস্ট মাস ।
• তৃতীয় সেমিস্টার সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। যদি আপনি সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন তাহলে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে এবং অনেক সময় লাগবে। অন্যদিকে আপনি যদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন, তাহলে অনেক কম সময়ে এবং অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পেয়ে যাবেন এডমিশন। সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি অফার লেটার ইস্যু করে আর সেটা পাঠিয়ে দেয় ইএমজিএসে (এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিস), আর সেখান থেকে ইস্যু করা হয় আপনার অ্যাপ্রুভাল লেটার।বিশ্ববিদ্যালয় সেই অ্যাপ্রুভাল লেটার সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
প্রয়োজনীয় নথিঃ
• সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং মার্কশীট।
• CV, মোটিভেশনাল লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার।
• বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনপত্র ও আবেদন ফি-প্রদানের ডকুমেন্টস।
• পাসপোর্টের কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
• রেফারেন্স লেটার।
• IELTS সার্টিফিকেটের কপি
• বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র।
টিউশন ফিঃ
মালয়েশিয়ায় টিউশন ফি ৪৫০০ থেকে ২৫,০০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০০ থেকে ৭০০০ রিঙ্গিত হয়ে থাকে। তবে মান সম্পন্ন শিক্ষার জন্য আপনাকে বেশি অর্থ গুনতে হবে। EMGS এর ফি দিতে হবে ১০০০ রিঙ্গিত। মনে রাখবেন এই ফি অফেরতযোগ্য। এছাড়া ইনস্যুরেন্স ফি ৫০০ থেকে ৮৫০ রিঙ্গিত, মেডিকেল ফি ২৫০ রিঙ্গিত দিতে হবে। এই দেশে কিছু সরকারি ও বেসরকারি স্কলারশিপ আছে। এই সব স্কলারশিপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হবে।
স্কলারশিপঃ
মালয়েশিয়ান সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ প্রদান করে থাকে। নিচে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখার জন্য যে সকল প্রতিষ্ঠান বৃত্তি দিয়ে থাকে তার একটি তালিকা দেওয়া হল-
• মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল বৃত্তি: (Malaysian International Scholarship (MIS)
ওয়েবসাইট: biasiswa.mohe.gov.my/INT/
• কমোনওয়েল্থ শিক্ষা বৃত্তি: (COMMONWEALTH Scholarship and Fellowship plan (CSFP)।
• বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ফান্ড।
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ও ডকুমেন্টস চেকলিস্টঃ
মালয়েশিয়ায় ভিসা আবেদনের জন্য আপনাকে ঢাকায় অবস্থিত মালয়েশিয়ার এম্বাসীতে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করে ভিসার আবেদন করতে হবে। ভিসা আবেদনের জন্য মূখ্যত প্রয়োজন হবে EMGS থেকে প্রাপ্ত Approval Letter. এই Approval Letter ও অন্যান্য ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার পর যাচাই বাছাই শেষ হলে আপনাকে ৩ মাসের ভিসা দেওয়া হবে। এরপর মালয়েশিয়ায় যাবার পর রেজিস্ট্রেশন ও মেডিক্যাল চেক-আপ ও কার্যক্রম শেষ করার পর ১ বছরের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথিঃ
• ভিসা আবেদন ফর্ম।
• পাসপোর্ট এবং ছবি।
• জীবন বৃত্তান্ত।
• Statement of Purpose (SOP) ও রেফারেন্স।
• সকল মার্কশিট ও সনদ, IELTS (যদি প্রয়োজন হয়)।
• No Objection Certificate [শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে]।
• Approval Letter
• ব্যাংক সলভেন্সি পেপার
• ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
• পুলিশ ক্লিয়ারান্স।
• হেলথ ইন্স্যুরেন্স।
ভিসা পেতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। আরা ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি ৩০ মার্কিন ডলার।
মালয়েশিয়ায় আবাসন ব্যবস্থাঃ
মালয়েশিয়ায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা। এজন্য আপনাকে যোগাযোগ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তারা আপনার হোস্টেলের ব্যবস্থা করবে। ৮-১০ হাজার টাকার ভেতরেই থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। ভাড়া নির্ভর করছে এলাকা, বাসস্থানের ধরন (স্টুডেন্ট হল, ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো এপার্টমেন্ট, একতলা বাড়ি, দোতলা বাড়ি প্রভৃতি), বাসায় থাকা সুবিধাদি, এবং অবশ্যই কতজন মিলে একসঙ্গে থাকছে তার ওপর।
পার্ট টাইম জব এবং স্থায়ী বসবাস এর সুযোগঃ
মালেয়েশিয়ায় একজন শিক্ষার্থী পড়াশুনা চলাকালীন সময়ে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা পার্ট টাইম জবের সুযোগ পেয়ে থাকে। অন্যদিকে জীবন ধারণ বাবদ আপনাকে খরচ করতে হবে মাসিক ৫০০-৬০০ রিঙ্গিত। এই অর্থে আপনি মাসিক থাকা-খাওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত সম্পূর্ণ করতে পারবেন। আপনি Employment Pass এর মাধ্যমে পড়াশুনা শেষে মালয়েশিয়ায় জব করতে পারবেন। এই পাস পেতে আপনার দুই বছরের কন্ট্রাক্ট পেপার লাগবে আর বার্ষিক স্যালারি হতে হবে ১২০৫ মার্কিন ডলার। আর স্থায়ী PR এর জন্য আপনাকে থাকতে হবে একটানা ৫ বছর।