আন্তর্জাতিক

মার্কিন ট্যুরিস্ট ভিসা চেয়ে আবেদন বলসোনারোর

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ছয় মাসের মার্কিন ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছেন বলে তার আইনজীবী জানিয়েছেন। যদিও সাবেক এই ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতেই অবস্থান করছেন।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাইর বলসোনারো এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার পরিকল্পনা সামনে আনলেন যখন মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তার ভিসা প্রক্রিয়ার কাজ চালাচ্ছেন। জানুয়ারির শুরুতে ব্রাজিলের কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলার ঘটনার পর দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে তার বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে।

বলসোনারো সেই দাঙ্গা ও সহিংসতার ঘটনায় ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন। তবে এই সহিংসতার পেছনে নিজের কোনও ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন কট্টরপন্থি এই নেতা।

জাইর বলসোনারোর আইনজীবী ফেলিপ আলেকজান্দ্রে বিবিসিকে বলেছেন, ব্রাজিলের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ‘নিজের জীবনের ৩৪ বছর জনসেবায় উৎসর্গ করেছেন’ এবং এখন ‘কিছু সময়ের জন্য অবসর নিতে চান’ তিনি।

জাইর বলসোনারো গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বারবারই সেই ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন। জানুয়ারি মাসের শুরুতে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নতুন সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। বলসোনারো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র।

এরপর ক্ষমতার লড়াই ঘিরে গত ৮ জানুয়ারি যেন বিক্ষোভের আগুনে বিস্ফোরিত হয় ব্রাজিল। আর এতেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর সমর্থকরা হামলা চালায় দেশটির কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট প্যালেস ও সুপ্রিম কোর্টে।

চরম ডানপন্থি এই সমর্থকরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে একের পর এক জায়গায় হামলা চালায়। বিরোধী দলের এই হামলার তীব্র সমালোচনা করে একে ‘ফ্যাসিস্ট’ হামলা বলে আখ্যা দেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।

ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনায় তদন্ত করছে এবং জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রসিকিউটররা বলেছেন, কট্টর-ডানপন্থি সাবেক এই প্রেসিডেন্ট গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একটি ভিডিও পোস্ট করার মাধ্যমে দাঙ্গায় উস্কানি দিয়ে থাকতে পারেন।

অবশ্য বলসোনারো তার সমর্থকদের এই দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত থাকার বা এর দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। পরে দাঙ্গার নিন্দাও করেছেন তিনি। যদিও গত বছরের অক্টোবরের নির্বাচনের পরাজয় এখনও স্বীকার করেননি বলসোনারো।

বিবিসি বলছে, বলসোনারো প্রাথমিকভাবে কূটনীতিক ও রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য এ-১ ভিসায় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যান। নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিন পর এই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়।

বলসোনারোর আইনজীবী ফেলিপ আলেকজান্দ্রে বলছেন, সাবেক এই ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট ‘তার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কয়েক মাসের জন্য বিশ্রাম করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটক হিসেবে সময় উপভোগ করবেন’ বলে আশা করছেন।

মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা গত শুক্রবার জাইর বলসোনারোর বি১/বি২ পর্যটন ভিসার আবেদন পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা জাইর বলসোনারোর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে কয়েক ডজন আইনপ্রণেতা বলসোনারোর যে কোনও ধরনের কূটনৈতিক ভিসা ‘প্রত্যাহার’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

যদিও বলসোনারো দাঙ্গার জন্য ‘কোনও দায় বহন করেন না’ বলে সোমবার ফিনান্সিয়াল টাইমসের কাছে দাবি করেছেন আলেকজান্দ্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *