সাহিত্য

বইমেলায় `আদর্শকে’ দ্রুত প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের নির্দেশ

সরকারপ্রধান ও সরকারের সমালোচনা করে লেখা তিনটি বইয়ের প্রদর্শন ও বিক্রি না করার শর্তে বইমেলায় আদর্শকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, সচিব ও অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিবকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বই তিনটি হচ্ছে- ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’, জিয়া হাদসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’। লেখক ফাহাম আব্দুস সালাম বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বড় মেয়ে শামারুহ মির্জার স্বামী।

আদর্শ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমানের রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বুধবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

অমর একুশে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনিক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

আইনজীবী অনিক আর হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছে। আর জিয়া হাদসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’ নিয়ে কথা উঠেছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে এ দুই বই নিয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি। কিন্তু আদালতের কাছে আমরা লিখিত দিয়ে বলেছি- এ তিনটি বই প্যাভিলিয়নে প্রদর্শন এবং বিক্রি করা হবে না। এরপর আদালত এই শর্তে চার ইউনিটের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সরকার বই তিনটি নিষিদ্ধ বা বাজেয়াপ্ত না করার পরেও বাংলা একাডেমি প্রকাশিত কোনো বইয়ে আপত্তি তুলে স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না, জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, বাংলা একাডেমি কি কি করতে পারবে আর কি কি করতে পারবে না, তা বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩-এ বলা আছে। এ আইনের কোথাও বলা নাই বাংলা একাডেমি বইয়ের মান ঠিক করে দেবে। বইয়ের মান ঠিক করে দেওয়ার এখতিয়ার বা ক্ষমতা বাংলা একাডেমির নেই।

বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনী চার ইউনিটের প্যাভিলিয়ন চেয়ে আবেদন করেছিল, আদালতের এ আদেশের পর সে অনুযায়ীই স্টল বরাদ্দ পাবে বলে মনে করছেন স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, এবারের মেলায় পুরনো প্রকাশনার সাথে ৬০টি নতুন প্রকাশনা আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এবারের বইমেলার স্টল/প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের তালিকা গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি, যাতে ‘আদর্শ’র নাম ছিল না। এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হলে গত ২২ জানুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আদর্শকে স্টল বা প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের লটারির জন্য বিবেচনা না করার ব্যাখ্যা দেয়। সেখানে বলা হয়, আদর্শ থেকে প্রাকাশিত ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটি অমর একুশে বইমেলা, ২০২৩-এর ‘নীতিমালা ও নিয়মাবলী’র ১৪ অনুচ্ছেদের ১৪.১৪, ১৪.১৫ উপ-অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। তাই মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম অদর্শের স্বত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বইটি মেলায় প্রদর্শন না করার শর্ত দিলে মাহবুবুর রহমান তা মানতে অস্বীকৃতি জানান। যে কারণে আদর্শকে স্টল/প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের লটারিতে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। পরে ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটির প্রদর্শন ও বিক্রি থেকে বিরত থেকে মেলার নীতিমালা অনুসরণ করা হবে জানিয়ে আবেদন করা হয় আদর্শের পক্ষ থেকে। এর পরেও স্টল/প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের লটারিতে আদর্শকে না রাখায় ২৪ জানুয়ারি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন মাহবুবুর রহমান। কিন্তু আবেদনটি খারিজ করে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রাখে বাংলা একাডেমি।

এরপর ২ ফেব্রুয়ারি একাডেমির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আদর্শের স্বত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান। মঙ্গলবার রিটের শুনানিতে ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ বইটির পাশাপাশি ‘উন্নয়ন বিভ্রম’ ও ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’ বই দুটি নিয়েও আপত্তি তোলে রাষ্ট্রপক্ষ। একপর্যায়ে বই তিনটি মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে না, এই মর্মে আদর্শের কাছে লিখিত অঙ্গীকার চান আদালত। সে অঙ্গীকার দেওয়ার পর আদর্শকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *