সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২১ সালে মোট দুই হাজার ২৮৫
জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৭৭ জন এবং
৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৬০৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন
করেছিলেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায়
২০২১ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে। ২০২০ সালে মোট ২
হাজার ৩১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ছিলেন দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আর ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৮৫ জন। অর্থাৎ এক
বছরের ব্যবধানে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে মোট ৩২ জন।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বড় দায় দেশের পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। কারণ গত কয়েক বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে
ধারাবাহিকভাবে কমছে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টিতে ৬৭৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছেন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৭৬ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে ৯০ জন।

অন্যদিকে, ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত ছিল ১ হাজার ৬০৪
জন বিদেশি শিক্ষার্থী। আর ২০২০ সালে ৩২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন
করছিলেন ১ হাজার ৫৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে ৫৪ জন।

ইউজিসির বিগত প্রতিবেদনগুলোতে দেখা যায়, দেশে গত এক দশকে যে হারে পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে সে হারে বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়েনি। পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগের বছর বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়লে, পরের বছর কমে যায়।
গত এক দশকের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার কখনও
বেড়েছে, কখনও কমেছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে ২১০ জন, ২০১২ সালে ৫২৫ জন, ২০১৩ সালে ৩২৬ জন, ২০১৪ সালে ৪৩২ জন, ২০১৫ সালে ৫৯৩ জন, ২০১৬ সালে ৩৫৫ জন, ২০১৭ সালে ৪৬২, ২০১৮ সালে ৮০৪ জন, ২০১৯ সালে ৪৮২ জন, ২০২০ সালে ৭৬৭ জন এবং ২০২১ সালে ৬৭৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

অন্যদিকে, গত এক দশকের হিসাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সব বছর বিদেশি
শিক্ষার্থী বেড়েছে। তার মধ্যে ২০১১ সালে ১ হাজার ৬৫১, ২০১২ সালে ১ হাজার ৬৪২,
২০১৩ সালে ১ হাজার ৬১২, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৬৪৩, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৪৮ জন, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৯২৭ জন, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৯৭৭ জন, তবে ২০১৮ সালে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সে বছর শিক্ষার্থী সংখ্যা তুলনামূলক হারে কমে গিয়ে ১ হাজার ৩৮৬ হয়। অবশ্য ২০১৯ পরে তা বেড়ে ১ হাজার ৪৬৭ জনে দাঁড়ায়, পরবর্তীতে ২০২০ সালে ১ হাজার ৫৫০ জন ও ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যয়নরত ছিল ১ হাজার ৬০৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতানুগতিক সিলেবাস, নিরাপত্তা ঘাটতি, আবাসন সংকটসহ বিভিন্ন
কারণে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমছে
এবং বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুবিধা ও পরিবেশ নিশ্চিত করায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশিরা ভর্তি হতে আগ্রহী হচ্ছে।

বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নানা কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি
শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জা তিক মানের ক্যাম্পাস হতে হয়।
এর জন্য অনেক কিছুর সংযোজন করা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বহু বিশ্ববিদ্যালয় নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, সেসব আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সেখানে অনেক অনেক অর্থায়ন আছে। বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ দেয়।’

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে বেশ কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে উল্লেখ করে ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স লাগে।
সেগুলোও সহজ করতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, এবারের বিদেশি
শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার পেছনে কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। মূলত কোভিডের কারণে বিদেশি  শিক্ষার্থীরা ওই সময় ভর্তি হতে পারেনি। ফলে সংখ্যাটা কিছুটা কমেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে পড়তে আসা বিদেশিদের অধিকাংশই আফ্রিকান।
আফ্রিকান এই শিক্ষার্থীরা এদেশে পড়তে এসে জঙ্গিবাদ, অর্থ পাচার, প্রতারণা, মাদকের
কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া কেউ কেউ স্টুডেন্ট ভিসায় এসে ফুটবল ক্লাবগুলো তে যুক্ত হয়ে ছয়-সাত বছর করে থাকছে। ফলে ভিসা প্রদানের আগে তাদের ব্যাপারে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

ফেরদৌস জামান বলেন, মোট তিনটি মন্ত্রণালয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভ্যারিফিকেশনের কাজ
করে। এক্ষেত্রে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব আছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান ভালো না হওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কমছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *