খেলাধুলা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও বিবর্ণ পিএসজি, বায়ার্নের কাছে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেদের হার

নতুন বছরটা পিএসজির জন্য যেন অভিশাপ হয়ে এসেছে। বছরের শুরু থেকে ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় হোঁচট খাচ্ছে প্যারিসিয়ানরা। ফলশ্রুতিতে কর্মকর্তা-খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বে বিষিয়ে উঠেছে ক্লাবের ভেতরের পরিবেশ। পিএসজির খাবি খাওয়ার সেই ধারা বজায় থাকলো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও। প্রতিযোগিতার শেষ ষোলোর প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ০-১ গোলে হেরেছে ফরাসি ক্লাবটি।

চোটের কারণে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে পিএসজির সর্বশেষ ম্যাচে দলের বাইরে ছিলেন লিওনেল মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপ্পে। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ম্যাচের স্কোয়াডে অবশ্য দুজনকেই রেখেছিলেন কোচ ক্রিস্টোফার গাঁলতিয়ের। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পার্ক দেস প্রিন্সেসে মেসি-নেইমার শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন, পরে নেমেছেন এমবাপ্পেও। তাতেও বায়ার্নের সঙ্গে পেরে ওঠেনি পিএসজি।

ঘরের মাঠে অধিকাংশ সময়েই বায়ার্ন মিউনিখের কাছে কোণঠাসা হয়ে ছিল পিএসজি। অন্যদিকে, ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের মাধ্যমে স্বাগতিকদের টুঁটি চেপে ধরে ছয়বারের শিরোপাজয়ীরা। বল দখলের লড়াইয়েও এগিয়ে ছিল জার্মান ক্লাবটিই। বায়ার্নের হাই-প্রেসিং ফুটবলের সামনে থিতু হতে কিছুটা সময় লাগে ক্রিস্টোফার গাঁলতিয়েরের শিষ্যদের।

ম্যাচের প্রথম আধা ঘণ্টায় অবশ্য গোলের কোনো পরিষ্কার সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। বারবার পিএসজির রক্ষণভাগে চাপ সৃষ্টি করলেও ফিনিশিংয়ের দুর্বলতার কারণে ভুগতে হচ্ছিল বায়ার্নকে। ২৭ মিনিটে প্রথমবারের মতো এগিয়ে যেতে পারতো বাভারিয়ানরাই। বেঞ্জামিন পাভার্ডের বাড়ানো থ্রুতে গোলের সুযোগ পেয়ে গেছিলেন জামাল মুসিয়ালা। তবে পোড় খাওয়া বর্ষীয়ান সেন্টারব্যাক সার্জিও রামোসের কল্যাণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় পিএসজি। মিনিট তিনেক পর কিংসলে কোমানের ক্রসে এরিক মাক্সিম চুপো-মোটিংয়ের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

প্রথমার্ধে রামোস-আশরাফ হাকিমিরা অনেকবারই বায়ার্ন মিউনিখের আক্রমণের সামনে ঢাল হয়ে পিএসজিকে বাঁচিয়েছেন। তবে জার্মানরা প্রথমার্ধের সেরা সুযোগটা পেয়েছিল মধ্যবিরতির দুই মিনিট আগে। জসুয়া কিমিখের নেওয়া জোরালো নিচু শট ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোন্নারুম্মা। বায়ার্নের দাপটের সামনে কাবু পিএসজি প্রথমার্ধে বেছে নিয়েছিল প্রতি-আক্রমণনির্ভর কৌশল। তবে প্রথমার্ধে মাত্র একটি শট নেওয়াই (সেটিও আবার লক্ষ্যভ্রষ্ট) বলে দেয় প্যারিসিয়ানদের সেই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর মধ্যবিরতিতে যায় দুই দল।

প্রথমার্ধে ব্যাকফুটে থাকলেও মধ্যবিরতির পরই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পিএসজি। ৫০ মিনিটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে শুরুর একাদশে জায়গা পাওয়া ওয়ারেন জায়রে-এমিরি বায়ার্নের ডি-বক্সে নেইমারের উদ্দেশে বল বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু ডায়োট উপামেকানোর কল্যাণে বাভারিয়ানদের বিপদ হয়নি।

তিন মিনিট পরই অবশ্য কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ। গোলটিও এসেছে পিএসজির ঘরের ছেলের পা থেকে। আলফোনসো ডেভিসের মাপা ক্রসে দারুণ এক ভলিতে বল জালে জড়িয়ে জার্মান ক্লাবটিকে এগিয়ে দেন প্যারিসে বেড়ে ওঠা কিংসলে কোমান। লিড পাওয়ার পরও আক্রমণের ধারা থামায়নি বাভারিয়ানরা। অবস্থা বেগতিক দেখে চোটের কারণে সর্বশেষ তিন ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকা এমবাপ্পেকে মাঠে নামান পিএসজি কোচ।

৬২ মিনিটে চুপো-মোটিংয়ের ওভারহেড কিক ফিরিয়ে বায়ার্নের লিড দ্বিগুণ হতে দেননি ডোন্নারুম্মা। পরের মিনিটে ক্যামেরুনিয়ান এ ফরোয়ার্ডের আরেকটি প্রচেষ্টা ইতালিয়ান গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে পোস্টে লেগে কর্নার হয়। সেই কর্নারে পাভার্ডের জোরাল হেডও ঠেকান তিনি।

এমবাপ্পের মাঠে নামান পর পিএসজির আক্রমণে ধার বেড়েছিল। অফসাইডে বাতিল না হলে ৭৩ মিনিটে তো ২৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের গোলে সমতাও ফিরিয়ে আনতো স্বাগতিকরা। মিনিট চারেক পর মেসির মাধ্যমে মার্কুইনিহোসের হেড ঠেকান বায়ার্ন গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। ৮২ মিনিটে আবারও বায়ার্নের জালে বল পাঠান এমবাপ্পে। তবে আক্রমণের শুরুতে নুনো মেন্ডেস চুল পরিমাণ ব্যবধানে অফসাইডে থাকায় গোলটি বাতিল হয়।

দুই মিনিট পরই মেসিকে দারুণ এক বল দিয়েছিলেন এমবাপ্পে। ৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ভালো শট নিলেও তা পাভার্ড আটকে দেন। যোগ করা সময়ে মেসিকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন এ ফরাসি ডিফেন্ডার। তবে দশজনের বায়ার্নকে পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় পিএসজিকে। কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে আগামী ৮ মার্চ বায়ার্ন মিউনিখের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা থেকে দুই গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে প্যারিসিয়ানদের ফিরতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *