সম্পাদকীয়

আত্মত্যাগের উপাখ্যান – বেনজীর আহমেদ

বেনজীর আহমেদ: গণতন্ত্রের প্রতীক নূর হোসেনের আত্মত্যাগের দিন আজ। সাল টি ১৯৮৭। ৯ই নভেম্বারের হিম শিতল রাত আরাম প্রিয় মানুষরা যখন কাথা টেনে গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে, ঠিক তখন এক দল ছেলের ঘুম নেই চোখে। দেশে স্বৈরাচারী শাসক। দেশের অবস্থা ভাল নেই, দেশে গণতন্ত্র নেই, সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা নেই।

আন্দোলন চলছে শক্ত হাতে। আর সেই আন্দোলন কে প্রতিহত করতে দেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা মানবে না কোন ধারা। অবৈধ সরকারের ধারা মানবে কেন দেশের মানুষ? এখন আর কোন বিরোধী দল নেই, সব এক। কিসের ছাত্রদল আর কিসের ছাত্রলীগ। সবার উদ্দেশ্য একটা সরাতে হবে স্বৈরাচারী শাসককে।

এর মধ্যে একটি ছেলে খুব চটপটে। পিরোজপুরের ছেলে, নাম নূর হোসেন। আন্দোলনে খুব সক্রিয় সে। নতুন একটা বুদ্ধি আসলো তার মাথায়। জীবন্ত পোস্টার হবে সে নিজেই। বুকে লিখবে স্বৈরাচার নিপাত যাক। আর পিঠে লিখবে গণতন্ত্র মুক্তি পাক। তারপর রাজপথে নামবে সে। থাকবে সে সবার আগে, যেন সে কারো  দৃষ্টি অগচর না হয়। এমন দৃঢ় মনোবল ছিলো তার। পরের দিন সকাল বেলা, আরাম প্রিয় মানুষ গুলো এখনো চোখ খুলেনি তখন মিছিল চলছে রাজপথে। স্লোগানে মুখোরিত রাজপথ। দুপুরের কড়া রোদে যখন আন্দোলন  জিরো পয়েন্টে পৌছায় ঠিক তখন স্বৈরাচারী সরকারের পোষা পুলিশ বাহিনী কোন রকম সতর্কীকরন ছাড়াই গুলি বর্ষন করে আন্দোলনকারীদের ওপর।

গুলি লাগে আন্দোলন কারী দের গায়ে লুটিয়ে পরেন অনেকেই। গুলি লাগে নূর হোসেনের বুকে। এই গোলা গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন নূর হোসেন। একটি গুলি বুক চিড়ে বের হয়ে যায় পিঠ দিয়ে।  দিক-বেদিক হয়ে এদিক সেদিক ছুটে বেড়ান আন্দোলনকারীরা। মুহূর্তেই রক্তে লাল হয়ে যায় রাজপথ। যারা আহত হন তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। নুর হোসেন সহ আরো দুই জন কে মৃত ঘোষনা করে দায়িত্বরত চিকিৎসক। সে দিন নুর হোসেন এর সাথে আরো শহীদ হন যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল এবং আমিনুল হুদা টিটু।

তাদের হত্যার পর এই আন্দোলন আরো ত্বরান্বীত হয়। জনপদে লাখ লাখ মানুষ নেমে আসেন। তাদের তাদের একটাই দাবী স্বৈরাচারী শাসকের পতন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর  স্বৈরাচারী শাসকের পতন হয়।

নূর হোসেন গণতন্ত্রের প্রতীক।  জীবন দিয়ে যে গণতন্ত্র রক্ষা করেছেন সেই গণতন্ত্র যদি কখনো হোচট খায় তখনই একটা নূর হোসেনের অভাব অনুভব করে দেশের জনগণ।

সালাম জানাই নূর হোসেন কে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *