চাকরি

৮০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি পেলেন দুদকের সেই শরীফ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালকের পদ থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া মো. শরীফ উদ্দিনকে ৩৫টির বেশি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে। সৌদি আরব থেকেও চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠান তাঁর কাছে নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছে।

শরীফকে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি ব্যাংক, এয়ারলাইনস কোম্পানি, বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, কয়েকটি পোশাক কারখানা, পোলট্রি কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, সিকিউরিটি কোম্পানি ও সৌদি আরবের একটি হীরার প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ কোম্পানি ঊর্ধ্বতন পদে নিতে চেয়েছে। এয়ারলাইনস কোম্পানি প্রধান নির্বাহী পদে এবং পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠানগুলো জিএম পদে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে।

ইতোপূর্বে তিনি বলেন পরবর্তী সপ্তাহে যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগদান করব। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারব, সেই প্রতিষ্ঠানেই যুক্ত হব।
অবশেষে ৮০ হাজার টাকা বেতনের চাকরিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি বেসরকারি ভেটেরিনারি মেডিসিন ফার্মে হেড অব টেকনোলজিস্ট হিসেবে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।যেহেতু ভেটেরিনারিতে পড়েছেন, সে কারণে প্রাণীদের চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক ছিলেন শরীফ উদ্দিন। দীর্ঘ সময় তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। তিনি কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন।

শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আমি সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুদকের চাকরি ফিরে পেলে সবচেয়ে বেশি ভালো হতো। রাষ্ট্রকে আরও বেশি সেবা করার সুযোগ পেতাম। বিদেশে অর্থ পাচার রোধসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারতাম।’

এক প্রশ্নের জবাবে শরীফ আজ  বলেন, ‘আমি আবার দুদকে ফিরে যেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবার যাতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়।’

শরীফ বলেন, কক্সবাজারে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা দায়ের ও তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়েন তিনি। অন্যায়ভাবে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

শরীফকে চাকরিতে পুনর্বহাল চেয়ে এক আইনজীবী হাইকোর্ট রিট করেন। সেটির এখনো শুনানি হয়নি।

সাড়ে সাত বছরের চাকরিজীবনের প্রথম ছয় বছরই বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) শরীফ উদ্দিনকে দুদকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ‘অতি উত্তম’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। তাঁকে তদন্তকাজে ‘অভিজ্ঞ’ এবং ‘উদ্যমী ও দক্ষ কর্মকর্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে দুদক। চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ উল্লেখ করেনি কর্তৃপক্ষ।

চাকরি হারিয়ে শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে বড় ভাইয়ের কনফেকশনারি দোকানে চাকরি করছেন। এ নিয়ে গত ৭ নভেম্বর ‘দুদকের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ এখন দোকানের কর্মী’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। শরীফ উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা দায়ের ও তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের রোষানলে পড়েন তিনি। অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় তাঁকে। চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদন করলেও তা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করলেও প্রভাবশালীদের বাধার মুখে হচ্ছে না। সে কারণে বাধ্য হয়ে বড় ভাইয়ের দোকানে চাকরি করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *