স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

হঠাৎ পা ফুলে গেলে করণীয়

হাঁটতে গিয়ে বা জুতা পরতে গিয়ে খেয়াল করলেন, কেমন যেন ভারী ভারী লাগছে পা। পা-টা যেন ফোলা ফোলা। জুতা বা মোজা আগের চেয়ে আঁটসাঁট লাগছে। এ রকম পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হওয়ারই কথা। শরীরের কোথাও জলীয় কিছু জমে গিয়ে এমন ফুলে ওঠাকে বলে ইডিমা। শরীরের অনেক অংশেই এমন পানি জমতে পারে, তবে অভিকর্ষের কারণে শরীরের নিচের দিকে পানি নামতে থাকে বেশি। প্রথমেই লক্ষ করার বিষয় হলো দুই পা ফোলা, নাকি এক পা।

দুই পা একসঙ্গে ফুলে যাওয়ার কারণ

  • কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অ্যামলোডিপাইন অথবা অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ব্যথানাশক অথবা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ, জন্মনিরোধক বড়ির কারণে পা ফুলতে পারে। দরকার হলে ওষুধ পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
  • অন্তঃসত্ত্বা নারীদের তৃতীয় ট্রাইমস্টার মানে শেষ তিন মাসে ইডিমা বা পা ফোলা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
  • যদি আপনার পায়ের শিরায় একমুখী ভালভগুলো দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে রক্ত জমে পায়ের শিরাগুলোয় ফোলাভাব সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে সাধারণত এটা দৃশ্যমান হয় বেশি। স্থূল মানুষদের এটা বেশি হয়।

‎তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই পা ফোলা বা ইডিমা‎ ‎গুরুতর অন্তর্নিহিত রোগের‎ লক্ষণ। যেমন হার্ট অকার্যকর, কিডনি অকার্যকর, লিভার অকার্যকর, থাইরয়েড হরমোনের অভাব, ‎‎অপুষ্টি‎‎‎। এদের প্রতিটিরই নিজস্ব অনুষঙ্গ থাকবে। যেমন শ্বাসকষ্ট, মুখ ফোলা, পেট ফোলা, জন্ডিস, প্রস্রাব কম হওয়া বা না হওয়া, গলার স্বরে পরিবর্তন ইত্যাদি।

এক পা ফোলার কারণ

শরীরের নিম্নভাগ থেকে রক্ত ফেরত নেওয়ার কাজ করে যে শিরা, কোনো কারণে যদি এসব শিরার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যায়, তাকে ‘ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস’ (ডিভিটি) বলে। ধমনির মাধ্যমে রক্ত পায়ে আসছে কিন্তু ফেরত যেতে পারছে না, তাই পা ফুলে যায়। উল্লেখ্য, জমাট রক্ত হৃৎপিণ্ড কিংবা ফুসফুসে গিয়ে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে। হঠাৎ ব্যথার সঙ্গে এক পা ফুলে শক্ত হয়ে যাওয়া ডিভিটির মূল লক্ষণ। এর ঝুঁকি বাড়ে যদি কোনো রোগী দীর্ঘদিন বিছানাবন্দী থাকে, ক্যানসারে ভোগে, পায়ে কোনো আঘাত পায়, উড়োজাহাজ, ট্রেন বা বাসে লম্বা পথ ভ্রমণ করে।

এ ছাড়া লসিকানালিতে ব্লক (লিম্ফ ইডিমা), প্রদাহ বা জীবাণুর সংক্রমণে সেলুলাইটিস (ত্বকের সংক্রমণ) হওয়ার কারণে পা ফুলতে পারে। অনেক সময় হাড় ক্ষয়জনিত হাঁটুব্যথাও পা ফোলার জন্য দায়ী।

করণীয়

হঠাৎ পা ফুলে যাওয়া সাময়িক যেমন হতে পারে আবার গুরুতর অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণও হতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ জানা অবশ্যকরণীয়। এ ছাড়া কিছু নিয়ম মেনে চললে পা ফোলা সাময়িক কমে যেতে পারে।

১. লবণ ও লবণজাতীয় খাবার কম খাওয়া।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করা।

৩. ঘুমের সময় পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা একটু উঁচু করে রাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *