স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

সারা বিশ্বের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সারা বিশ্বের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার ফলে বাংলাদেশে অপুষ্টির হার কমেছে এবং শিশু ও মাতৃমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রা্স পেয়েছে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব নেতৃত্বের পুষ্টি ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

শনিবার (১ জুন) সকালে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) অডিটোরিয়ামে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুদের মাঝে রাতকানা রোগের হার ৪.১০ শতাংশ ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে রাতকানা রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম গ্রহণ করে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু করেন। পরবর্তীতে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো অব্যাহত রাখার ফলে বর্তমানে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় নাই বললেই চলে।

তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ক্যাম্পেইনকে সফল করতে জনগণের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আর তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রয়োজন। লেখনি ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া এই কার্যক্রমের ব্যাপক প্রচার করলেই আমাদের কার্যক্রমটি আরও সাফল্য মন্ডিত হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি জাতিকে অন্ধত্ব ও অপুষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পর্যালোচনার জন্য ক্যাম্পেইনের দিন প্রতিটি উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে।

জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের সফলতা উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, বছরে ২ বার শতকরা ৯৮ ভাগ শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ানোর ফলে ভিটামিন ‘এ’ অভাবজনিত অন্ধত্বের হার শতকরা ১ ভাগের নিচে কমে এসেছে এবং শিশু মৃত্যুর হারও কমেছে। এই সাফল্য ধরে রাখতে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো চলমান রাখতে হবে। সেই লক্ষ্যে শনিবার সারা দেশে প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ শিশুকে ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী ইপিআই কেন্দ্রের মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে।

জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন একটি শিশুও যেন বাদ না পড়ে; সকল শিশুকেই যেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল  খাওয়ানো হয়। যাদের ঘরে ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু আছে সেইসব মা-বাবা এবং অভিভাবকরা যেন অবশ্যই তাদের শিশুদের নিকটস্থ কেন্দ্রে (ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র) নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ান।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিশ্বস্বাস্থ্য) ড. মো. জিয়াউদ্দীন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ) মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এনডিসি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা) শিব্বির আহমেদ ওসমানী, নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল হকসহ অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *