চাকরি সাজেশন

ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার গঠনে প্রাধান্য পাবে যে বিষয়সমূহ

স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ফাইনাল ইয়ারে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিজীবীরাও একটি সফল ক্যারিয়ারের স্বপ্নে বিভোর থাকেন। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনা, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বা ক্যারিয়ার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় পিছিয়ে পড়েন বেশিরভাগই। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোন বিষয়গুলোর চাহিদা কেমন বাড়ছে/কমছে এ বিষয়েও অনেকের স্পষ্ট ধারণা থাকে না।

বাংলাদেশের প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন করে বের হয়। দেখা যায় তাদের মধ্যে ৩৩% গ্র্যাজুয়েট কোন চাকরি পায় না, এক কথায় বলতে গেলে তারা বেকার বসে থাকে। বেকারত্ব বাংলাদেশের অনেক বড় সমস্যা। বর্তমানে এ বেকারত্বের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়, গ্র্যাজুয়েশনের সময় ভুল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা। নিজের জন্য কোন সেক্টরটা এবং এর মধ্যে কোন সেক্টরের চাহিদা  আগের চেয়ে তুলনামূলক ভালো আগে সেটা ঠিক করে নিতে হবে। চলুন দেখা নেওয়া যাক, ভবিষ্যতে যে বিষয়ের ক্যারিয়ার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে-

 

১। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

বর্তমান যুগ কম্পিউটারের যুগ এবং এই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যতের চাকরি পাওয়ার কোনো অসুবিধা হয় না। এখন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্টদের জন্য রাখা হয়েছে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টিতে কম্পিউটারের মৌলিক এবং উন্নত দিক সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান এবং একাডেমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এছাড়া, হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দুটি সম্পর্কেই শেখানো হয়। এই সাবজেক্টে মূলত চার বছর পড়তে হয় গ্রাজুয়েশন করার জন্য। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করলে তাহলে আপনি গ্র্যাজুয়েশনের সময় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে পড়তে পারবে।

এই বিষয়টি পড়লে ভবিষ্যতে অনেক সেক্টরে কাজ করা সম্ভব। যেমন: মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাটা রিচার্জ, ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি।

 

২। ফাইনান্সিয়াল এন্ড একাউন্টিং

বর্তমানে চাকরির সেক্টরগুলোর মধ্যে ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টিং সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। কারণ এই সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশ রয়েছে এবং বেতন ব্যবস্থাও বেশ ভালো। ফাইনান্স এবং একাউন্টিং নিয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যতে ভালো চাকরি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ফাইন্যান্স এবং একাউন্টিং‌ পড়লে শিক্ষার্থীরা রেকর্ডিং, অর্থ বিশ্লেষণ, লেনদেন এবং দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে শিখতে পারবে এবং কাজ করতে পারে। এসএসসি এবং এইচএসসিতে কমার্স বিষয়ে পড়াশোনা করলে তাহলে আপনি গ্র্যাজুয়েশনের সময় ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টিং নিয়ে পড়তে পারবেন।

এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরিগুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব- যেমন: চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, কর্পোরেট ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার, ফাইন্যান্স এডভাইজার, ট্যাক্স একাউন্টেন্ট, ইন্সুরেন্স ব্রোকার, কমপ্লায়েন্স অফিসার ইত্যাদি।

 

৩। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এন্ড মার্কেটিং

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং মার্কেটিং এই দুটো বিষয়ের এখন অনেক বেশি ডিমান্ড। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এবং মার্কেটিং দুইটি বিষয় নিয়ে পড়লে বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চাকরি পাওয়ার সহজ হয়ে যায়। ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলো চাহিদা আরও বাড়তে থাকবে।

মার্কেটিং নিয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীরা বাজার বিশ্লেষণ, কিভাবে ব্যবসা প্রচার করতে হবে, গ্রাহকদের কিভাবে পণ্য কেনার জন্য রাজি করতে হবে এবং নিজের পণ্য কিভাবে অন্যের পণ্য থেকে আলাদা করে প্রচার করতে হবে- এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে শিখতে পারবে।

হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট পড়লে গ্রাহক এবং কম্পানির রিলেশনশিপ, আর কোম্পানি এবং কর্মচারীদের রিলেশনশিপ সম্পর্কে জানতে পারবে। আরো জানতে পারবে কিভাবে কোম্পানির ভিতর কর্মচারীদের হক রক্ষা করা যায়।

এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরি গুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব- যেমন: এইচআর ম্যানেজার, ব্রান্ড ম্যানেজার, সেলস ম্যানেজার, এইচআর জেনারেলিস্ট, মার্কেটিং এনালিস্ট, ডিমান্ড প্ল্যানার ইত্যাদি।

 

৪। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বাংলাদেশের অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়তে পছন্দ করেন। বিষয় নির্ধারণ করার সময়, চিন্তা ভাবনা করে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নেওয়া উচিত। কারণ অনেকেই এই সাবজেক্টে কঠিন বলে মনে করেন এবং মাঝরাস্তায় পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনেক ভালো একটি বিষয় যদি বুঝে পড়া যায়।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে আপনি অনেক কাজ করতে পারবেন দেশ এবং দেশের বাইরে। এই বিষয়ে মূলত যা শেখানো হয়: সিস্টেম এনালাইসিস এন্ড ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অফ ম্যাকহারটোনিক্স টেকনোলজি, ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট/এডভাইজ, অটোমেশন/কন্ট্রোলিং সিস্টেম, একাউষ্টিক কনসালটেন্ট, ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার, কন্ট্রোল এন্ড ইন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি।

 

৫। আর্কিটেকচার

বর্তমান বিশ্বের অত্যন্ত জনপ্রিয় বিষয় হচ্ছে আর্কিটেকচার। ছাত্রছাত্রীরা যদি আর্কিটেকচার নিয়ে পড়তে পারে তাহলে ভবিষ্যতে চাকরির কোন অভাব হয় না। আর্কিটেকচার একটি ডিজাইন এবং স্ট্রাকচার বেইজড বিষয়। বাংলাদেশ আর্কিটেকচার পড়তে প্রায় ৫ বছর সময় লাগে। এসএসসি এবং এইচএসসিতে মানবিক বিষয়ে পড়াশোনা করলে তাহলে আপনি গ্র্যাজুয়েশনের সময় ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টিং নিয়ে পড়তে পারবেন।

আর্কিটেকচার নিয়ে পড়লে ভবিষ্যতে খুব ভালো চাকরি পাওয়া যাবে। সেই চাকরি হবে সম্মানজনক এবং বেতন বেশি হবে। এই বিষয়টি মূলত বিল্ডিং ডিজাইনিং নিয়ে। এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরি গুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব- যেমন: সিএডি টেকনেশিয়ান, কন্সট্রাকশন ম্যানেজার, ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার, বিল্ডিং ডিজাইনার, ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ইত্যাদি।

 

৬। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

বাংলাদেশের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়া সহজ হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারি এবং বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মূলত রাস্তা, ব্রিজ, রেলবে, ইত্যাদির ডিজাইনিং এবং কনস্ট্রাকশন সম্পর্কে শেখানো হয়। এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরি গুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব-

যেমন: কনসাল্টিং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার জিওলজিস্ট, বিল্ডিং সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, এনভায়রনমেন্টাল কনসালটেন্ট।

 

৭। ফার্মাসি

বাংলাদেশের ফার্মাসি সেক্টর দিনদিন উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সেক্টর আরো অনেক এগিয়ে যাবে। এভাবে এ খাতটি আন্তর্জাতিক মান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। ছাত্র-ছাত্রীরা যদি ফার্মেসি সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করে তাহলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো ভালো চাকরি করতে পারবে। ফার্মেসি বিষয়ে মূলত ওষুধের কেমিক্যাল বিশ্লেষণ এবং তৈরির প্রণালী শিখানো হয়।

এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরিগুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব- যেমন: কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট, হসপিটাল ফার্মাসিস্ট, রিচার্জ সাইন্টিস্ট (মেডিকেল)।

 

৮। ইকোনমিক্স 

বর্তমানে ইকোনমিক্স বিষয়ের অনেক ডিমান্ড বাংলাদেশ। ভবিষ্যতেও এই বিষয়ে ডিমান্ড থাকবে। এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে চাকরি করা অনেক সহজ এবং স্থায়ী। এই বিষয়ে মূলত ম্যানুফ্যাকচার, সার্কুলেশন এবং জিনিসপত্রের খরচ সম্পর্কে শেখানো হয়। এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরি গুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব-

যেমন: ইকোনমিস্ট, স্ট্যাটিস্টিয়ান, প্রোডাক্ট ম্যানেজার, সিনিয়র মার্কেট এনালিস্ট, কোয়ান্টিটেটিভ এনালিস্ট ইত্যাদি।

 

৯। আইন

আইন নিয়ে পড়লে ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যতে অনেক ভালো চাকরি করতে পারবে। কারণ বাংলাদেশে এ বিষয়ে অনেক দাম এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে মনে হয় ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অনেক উকিলের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে। এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরিগুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব-

যেমন: প্রোভিশন অফিসার, প্যারালিগাল, পলিসি এনালিস্ট, সিনিয়র কমপ্লায়েন্স অফিসার, ইমিগ্রেশন লইয়ার ইত্যাদি।

 

১০. ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং

বাংলাদেশ এই বিষয়টির ডিমান্ড দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা সবাই জানি যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর অনেক বেশি উন্নত এবং আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গার্মেন্টস মেটারিয়াল এক্সপোর্ট করে থাকি। ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিষয়ে পড়াশোনা করলে তাদের ভবিষ্যতে চাকরি পেতে সুবিধা হবে।

এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে যেই চাকরি গুলো ভবিষ্যতে করা সম্ভব- যেমন: ফ্যাশন ডিজাইনার, রিটেল বায়ার, রিটেল মার্চেন্ডাইজার, স্টাইলিস্ট, টেক্সটাইল ডিজাইনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *