সুইডেনের রসায়নবিদ ও শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেল, যার মাধ্যমেই চালু হয় নোবেল পুরষ্কার প্রথা। আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২৭ নভেম্বর ১৮৯৫ সালে অর্থাৎ তার মৃত্যুর এক বছর আগে এই পুরষ্কার প্রদানের জন্য উইল করে যান আলফ্রেড নোবেল।
জীবদ্দশায় নোবেল অনেকগুলো উইল লিখেছিলেন, এর মধ্যে সর্বশেষটি লিখেন ১৮৯৫ সালে । তবে উইল করলেও তা কার্যকর হতে দেখে যেতে পারেন নি নোবেল। ১৯০১ সালে সর্বপ্রথম নোবেল পুরস্কার প্রদান করা শুরু হয়।
ইতিহাস অনুযায়ী, নোবেল পাঁচটি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়ার জন্য তার মোট সম্পত্তির শতকরা ৯৪ ভাগ দান করে যান। যার মোট পরিমাণ ৩১ মিলিয়ন এসইকে (৩.৪ মিলিয়ন ইউরো, ৪.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
তার উইলটি ছিল এরকম–
আমার অবশিষ্ট আদায়যোগ্য সম্পত্তির পুরোটাই নিম্নলিখিত উপায়ে বন্টন করা হবে:
পুঁজি আমার নির্বাহকদের দ্বারা নিরাপদ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হবে এবং একটি তহবিল গঠন করবে, যার সুদ বার্ষিক পুরস্কারের আকারে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে যারা, পূর্ববর্তী বছরে, মানবজাতিকে সর্বাধিক সুবিধা প্রদান করবে।
উল্লিখিত সুদ পাঁচটি সমান অংশে বিভক্ত হবে, যা নিম্নরূপ বিভক্ত করা হবে: একটি অংশ সেই ব্যক্তির কাছে যিনি পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছেন; একটি অংশ যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক আবিষ্কার বা উন্নতি করেছেন; একটি অংশ সেই ব্যক্তির জন্য যিনি ফিজিওলজি বা ওষুধের ডোমেনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন; একজন ব্যক্তি যিনি সাহিত্যের ক্ষেত্রে আদর্শবাদী প্রবণতার সবচেয়ে অসামান্য কাজ তৈরি করেছেন; এবং একটি অংশ সেই ব্যক্তিকে যিনি জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের জন্য, স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা হ্রাস করার জন্য এবং শান্তি কংগ্রেসের আয়োজন ও প্রচারের জন্য সবচেয়ে বা সেরা কাজ করেছেন।
পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নের জন্য পুরস্কার সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস দ্বারা প্রদান করা হবে; যেটি স্টকহোমের ক্যারোলিন ইনস্টিটিউট দ্বারা শারীরবৃত্তীয় বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের জন্য; স্টকহোমে একাডেমি দ্বারা সাহিত্যের জন্য যে; এবং নরওয়েজিয়ান স্টরটিং দ্বারা নির্বাচিত পাঁচ ব্যক্তির একটি কমিটি দ্বারা শান্তির চ্যাম্পিয়নদের জন্য। এটা আমার প্রকাশ্য ইচ্ছা যে পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের জাতীয়তাকে বিবেচনা করা হবে না, যাতে সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি পুরস্কারটি পান, সে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান হোক বা না হোক।
তবে আলফ্রেড নোবেল তার উইলে অর্থনীতির কথা উল্লেখ না করলেও ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু করে নোবেল ফাউন্ডেশন।
সুইডিশ বিজ্ঞানী নোবেল একাধারে রসায়নবিদ, প্রকৌশলী ও একজন উদ্ভাবক ছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি একটি বফর লোহা ও ইস্পাত কারখানা কেনেন, যা পরবর্তীতে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানায় পরিণত করেন। তিনি ব্যালিস্টিক উদ্ভাবন করেন, যা সারা বিশ্বব্যাপী ধোঁয়াবিহীন সামরিক বিস্ফোরক বা ডিনামাইট হিসেবে পরিচিত।
আর ডিনামাইটের মাধ্যমে তার প্রচুর আয় হয়, আর এই আয়ের অর্থ দ্বারাই তিনি পুরস্কার প্রদানের কথা বলে যান। মূলত তার বিস্ফোরকের মাধ্যমে যেসব ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেই তিনি এই পুরষ্কারের জন্য উইল করে যান।