বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

কুবি শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট নিকো এক মাইলফলক

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’  টিম রোবট ‘সিনা’ ও ‘ব্লুবেরি’র পর এবার তৈরি করলেন ‘রোবট নিকো’। যা একজন মানুষের সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারবে। নিকোকে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও রোবট নিকো চলাফেরা বা কথা বলার পাশাপাশি মানুষের ছবি দেখে বলে দিতে পারবে পরিচয়। যেকোন এলাকা থেকে ছবি তুলে ভিডিও করে তথ্য দিতে পারবে নিকো।

প্রায় এগারো মাস নিরলস কাজ করে রোবটটি তৈরি করেন ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’ টিমের সদস্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সনজিৎ মন্ডল ও ইনফরমেশন এন্ড কমিউকেশন এন্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল নাথ, অনিক চক্রবর্তী, তৌসিফ বিন পারভেজ ও মাহিন খান।

তারা জানান, ‘রোবট নিকো’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে রাসবেরি পাই নামে ক্ষুদ্র কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়েছে; যা কাজ করবে নিকোর মস্তিষ্ক হিসেবে। প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রোগ্রাম সেট সংরক্ষণ করা যাবে এর মাধ্যমে বলেও জানান তারা।

এছাড়াও, থ্রিডি মডেল ডিজাইন করে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে রোবটের বডির বিভিন্ন অংশ তৈরি করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে হিউম্যান ফেইস ডিটেক্টশন এবং ফেইস রিকগনিশন করতে পারবে নিকো । ফেইস ডিটেকশনের মাধ্যমে মানুষের মুভমেন্ট বুঝতে পারবে এটি। এছাড়া ফেইস রিকগনিশনের মাধ্যমে মানুষের ছবি দেখে বা মানুষকে দেখেই চিনতে পারবে। রোবট নিকো মুভমেন্ট করার জন্য তার শরীরে ২৯টি ডিগ্রি অব ফ্রিডম রয়েছে।

এ নিয়ে ‘রোবট নিকো’ টিমের সফটওয়্যার দেখভালের দায়িত্বে থাকা জুয়েল নাথ বলেন, এর আগে ‘রোবট সিনা ও ব্লুবেরি’ তৈরিতে যে উপকরণ বা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি সেগুলার চেয়ে আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। পড়াশুনা, পরীক্ষার পাশাপাশি রোবট তৈরিতে সময় দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, রোবটিক্সকে জনপ্রিয় করতে আমরা কুমিল্লার স্কুল পর্যায়েও কাজ করেছি।

তিনি আরও বলেন, আগে দুইটি রোবট চলাফেরা, কথা বলা, করোনার নমুনা সংগ্রহ, আগুনে সতর্ক করার মতো কাজ করতো। কিন্তু ‘রোবট নিকো’ তৈরিতে আমরা আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছি। এটি কথা বলার পাশাপাশি ছবি দেখে বা মানুষ দেখে বলে দিতে পারবে তার পরিচয়। চাইলে এমন রোবটকে মানুষ নিজের সহকারী হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে।
‘রোবট নিকো’ নির্মাতারা জানান, কুমিল্লা জেলার প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রোবটটি তৈরি করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফ্যাবল্যাবে কাজ করেন তারা।

এ নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আজকে নিকো অফিসিয়ালি প্রকাশ পেল। এটি রেসফন্স করতে পারে, নিজে নিজের পরিচয় দিতে পারে। ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’ ও ফ্যাবল্যাব সম্মিলিতভাবে এটা করেছে।

অর্থায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আমাদের সন্তানদের কাছে তুলে ধরা। প্রযুক্তিকে বাচ্চাদের কাছে হাতে-কলমে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কারণ আগামীর বিশ্ব শাসন করবে গণিত, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি। আমাদের সন্তানেরা যেন প্র্যাকটিক্যালি এসব দেখে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শেখায় উদ্বুদ্ধ হয়, উজ্জীবিত হয়।

হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট, নার্সিং, রোগীদের বিভিন্ন সাপোর্ট দিতে রোবট সহযোগিতা করবে। রোবট ইন্ডাস্ট্রিয়াতে কাজ করবে, গৃহস্থালিতে কাজ। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে রোবটিক্সকে এগিয়ে নেওয়ার। রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং কে জনপ্রিয় করে তুলতে মূলত এ পরিকল্পনা করা বলেও জানান তিনি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *